‘প্রবাসী নতুন প্রজন্মই হোক আগামী ফোবানার শক্তি’- এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে আগামী ২৯, ৩০, ৩১ আগস্ট নিউইয়র্কের নায়াগ্রার হোটেল শেরাটনে ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশনস অব নর্থ আমেরিকা’ (ফোবানা)-এর ৩৯তম সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। আয়োজন করা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলনের। চলতি বছরের সম্মেলন উপলক্ষ্যে সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ নেওয়াজ বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে ‘ফোবানা’ (ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশনস অব নর্থ আমেরিকা) প্রবাসের একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন। ফোবানা উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের বৃহত্তম একটি সংগঠন। এটি মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও কানাডা থেকে পরিচালিত বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রথম সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফোবানার যাত্রা শুরু হয়। ফোবানার মূল লক্ষ্য ছিলো: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদেও মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি, বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং এর প্রচার ও প্রসার, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন রচনা করা। ফোবানা সৃষ্টির পর থেকে আমরা সে লক্ষেই কাজ করে আসছি। আমাদেও নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর সবক’টি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে না পারলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। আর তারই ফলশ্রুতিতে আমরা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও পাশের দেশ কানাডায় মিলে ৩৮টি সফল সম্মেলন উপহার দিতে পেরেছি।
সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান (এডমিন) গিয়াস আহমেদ বলেন, গত দুই বছর আমাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমরা পৃথকভাবে সম্মেলন করেছিলাম। কিন্ত পৃথক সম্মেলন আয়োজন করলেও মন এবং মননে আমরা ফোবানার লক্ষ্য থেকে কখনো বিন্দুমাত্র বিচ্ছুত হয়নি। তাই আমাদের মধ্যকার সব ধরণের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এবারের সম্মেলন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আয়োজন করছি। পাশাপাশি ফোবানার বিভক্ত সকল গ্রুপকে জাতীয় স্বার্থে দল মতের উর্ধ্বে ওঠে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক ফোবানার পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয় যে, ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া এবারের সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনার জোর প্রয়াস থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের সম্মেলন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য একটি মিলনমেলা এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাসের জন্ম দেবে। বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সৃজনশীলতাকেও এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রবাসীদের নিয়ে বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, বিজনেস লাঞ্চ, বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, কৃষ্টি, ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন আসর, ইয়্যুথ গ্রুপের কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এবারেও ফোবানার কার্যক্রম নিয়ে একটি ম্যাগাজিন বা স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সম্মেলনের ‘প্রবাসী নতুন প্রজন্মই হোক আগামী ফোবানার শক্তি’ মূল প্রতিপাদ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে কিভাবে ফোবানার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি ও দায়িত্ব দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রাধান্য থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং প্রবাসের শিল্পীদের নিয়ে একটি নান্দনিক অনুষ্ঠান উপহার, ইস্যুভিত্তিক সেমিনারগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শাহ নেওয়াজ সহ অন্যান্য কর্মকর্তার মধ্যে বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. মাসুদুর রহমান, ফোবানা’র স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান (এডমিন) গিয়াস আহমেদ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী ও সম্মেলনের কনভেনর কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, সম্মেলনের মেম্বার সেক্রেটারী মইনুল হক চৌধুরী হেলাল এবং মোহাম্মদ হোসেন খান, আবু জোবায়ের দারা ী হাসানুজ্জামান হাসান। এসময় ফোবানা কর্মকর্তাদের মধ্যে আলী ইমান শিকদার, নিশান রহীম, খন্দকার ফরহাদ, ফাহাদ সোলায়মান, ওয়াহিদ কাজী এলিন এবং সাপ্তাহিক নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।