ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমন্সে এক আবেগঘন বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা (মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা এমপি) আপসানা বেগম। বক্তব্যে তিনি সাবেক স্বামী এহতেশামুল হকের বিরুদ্ধে হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়োগকর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানান তিনি।
গত বছর লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া আপসানা বেগম পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, এহতেশামুল তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একটি 'অভিযান' পরিচালনা করছেন। ওই উদ্দেশ্যেই একই নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
আপসানা বেগমের দাবি, তার সহযোগীদের একটি চক্র আমাকে অন্যায়ভাবে অপসারণ করার চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন হয়রানি আমি সহ্য করে চলেছি।
তার বক্তব্য সাবেক দম্পতির বিতর্কিত সম্পর্কের ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। দুজনই বাংলাদেশি-অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের পরিচিত মুখ। আগামী নির্বাচনে তারা একই আসনে আবারও প্রার্থী হবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত আপসানা এখন জেরেমি করবিনের নতুন দলে নেতৃস্থানীয় একটি পদে যোগ দেবেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশে সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি বা এনসিপি) যোগ দিয়েছেন এহতেশামুল। আইনপ্রণেতা হওয়ার বদলে দল গোছানোই তার উদ্দেশ্য বলে দাবি করেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন এহতেশামুল। আগে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, আপসানার প্রতি আমার কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। তাকে আমি সাবেক স্ত্রী হিসেবে সম্মান করি। কিন্তু সাবেক স্ত্রীর আসন নিয়ে কথা বলতে বা সেখানে প্রার্থী হতে কোনও আইনি নিষেধাজ্ঞা তো নেই।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আপসানার বক্তব্যের বিষয়ে তার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ নির্বাচনে লেবার পার্টির আপসানার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল। তিনি এর আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের নির্বাচনে হেরেছিলেন।
জুলাইয়ের নির্বাচনে আপসানা ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট আর এহতেশামুল চার হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আপসানার অনেক সমর্থকের দাবি, জয়ের সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও শুধু আপসানার বিরোধিতা করার জন্যই প্রার্থী হয়েছিলেন এহতেশামুল।
এই দম্পতির পৈত্রৃক নিবাস বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে। ২০১৩ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং দুবছর পরই বিচ্ছেদ হয়। তাদের সম্পর্কের বিভিন্ন জটিলতা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আপসানা অভিযোগ করেন যে, তিনি পারিবারিক এবং আর্থিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করা হত।
এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আপসানা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতন বিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের তিনটি ঘটনার জন্য ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। তবে, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই আদালত তাকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেন। আপসানার দাবি, এহতেশামুলের বিদ্বেষমূলক প্রচারণার অংশ হিসেবেই ওই অভিযোগগুলো গঠনের চেষ্টা করা হয়।