সোনার চাবি দিয়ে কাছারিঘর উদ্বোধন করেন কবিগুরু

ঘুরে আসুন ঐতিহ্যবাহী আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ি

আলম ফরাজী
  ১৯ মে ২০২৫, ১১:৪০

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আঠারবাড়ী জমিদারবাড়িতে সোনার চাবি দিয়ে নিজহাতে উদ্বোধন করেছিলেন কাছারিঘর। এটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এখানে আছে অনেক পুরনোকীর্তি। রয়েছে নন্দিত কথাসাহিত্যকি হুমায়ূন আহমেদের শুটিং করা নাটক ও সিনেমার স্থান।
এ ছাড়াও রয়েছে যেখানে রয়েছে একটি ডিগ্রি কলেজ।
জানা যায়, জীবনের শেষ সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আঠারবাড়ী জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন। ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে আঠারবাড়ীর জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে কবি জমিদারের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। পরে সেখানে তিনি একটি কাছারিঘরের তালা সোনার চাবি দিয়ে খুলে উদ্বোধন করেন।
সেই কাছারিঘরটি এখনো কবিগুরুর স্মৃতি বহন করে। আর তা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে মানুষ।
বিভিন্ন লেখকের লেখা ও রবীন্দ্র গবেষকদের কাছ থেকে জানা যায়, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর শুভেচ্ছা বিনিময় ও শান্তি নিকেতনকে বিশ্বনিকেতন করে গড়ে তোলার জন্য নৈতিক ও আর্থিক সমর্থনের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন। এক সপ্তাহ ঢাকায় সরব উপস্থিতি শেষে তিনি ময়মনসিংহে আসেন।
বেশ কয়েকজন প্রাবন্ধিকের লেখা থেকে জানা যায়, ওই সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কবি ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে পৌঁছলে ময়মনসিংহবাসী ভালোবাসার অর্ঘ্য সাজিয়ে উলু ও শঙ্খধ্বনির মাতমে পুষ্পাঞ্জলি দেয়। জনতার মধ্য থেকে মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী কবিকে দেন বরণ মালা। তখন কবির সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি ও অধ্যাপক কারলো জারমিকি, কবির ব্যক্তিগত সচিব হিরজি ভাই মরিচ, অধ্যাপক নেপাল চন্দ্র রায়, কালী মোহন ঘোষ প্রমুখ। সারা দিন কবি সংবর্ধিত হয়ে রাত যাপন করেন সূর্যকান্তের বাগান বাড়িতে। বর্তমানে যা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ।
পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে কবিকে সংবর্ধনা দেয় ব্রাহ্ম সমাজ ও ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শান্তিনকেতনের জন্য ৬২৫ টাকার তোড়া কবিকে উপহার দেন। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মুক্তাগাছার অন্যতম জমিদার সুরেন্দ্র নারায়ণ আচার্য চৌধুরীর ময়মনসিংহ শহরের বাড়িতে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় কবির হাতে দেড় হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় ত্রয়োদশ সম্মিলনীর বিশ্ব ভারতীর সাহায্যের জন্য।
একই দিন বিকেলে ময়মনসিংহ টাউন হলে আমজনতার পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হয় তাকে। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তিনি ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় বিশ্বভারতীর জন্য ১০১ টাকা সাহায্য নেন তিনি। পরে সিটি কলেজ মহিলা সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনায় তাকে ১১১ টাকা মূল্যের স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ীর উদ্দেশে ট্রেনযোগে রওনা হন কবিগুরু। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুরের শত শত লোক একনজর দেখতে ট্রেন থামিয়ে দেয় ঈশ্বরগঞ্জ সদরে। কিছুক্ষণ পর আঠারবাড়ী রেলস্টেশনে পৌঁছলে কবিকে হাতির পিঠে চড়িয়ে স্লোগান দিতে দিতে জমিদার বাড়ির মূল ফটকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কবিকে সোনার চাবি উপহার দেন জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরী। সেই চাবি দিয়ে তিনি কাছারিঘরের মূল ফটকের দরজা খোলেন। পরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর কবির জন্য আয়োজন করা হয় বাউল, জারিসারি, মারফতি, পালাগানসহ এলাকার ঐতিহ্যবাহী গেটু গানের আসর। তিনি এ ধরনের আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই কাছারিঘরটির নিচে এখন আঠারবাড়ী কলেজের শ্রেণিকক্ষ।
যেভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে বাসে যেতে চাইলে বিভিন্ন বাস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- এনা, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, শৌখিন কিংবা নিরাপদ পরিবহন। বাসগুলো ময়মনসিংহ আসতে সময় নেয় সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা। বাস ভেদে ভাড়া পড়তে পারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া শ্যামল ছায়া, এমকে সুপার ও বিআরটিসি দোতলা বাসও রয়েছে। যা দিয়ে আসতে হবে ঈশ্বরগঞ্জ অথবা নান্দাইলের চৌরাস্থা। ঈশ্বরগঞ্জ থেকে যেতে চাইলে ছোট বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আছে। তাছাড়া নান্দাইল চৌরাস্থা থেকে আঠারবাড়ী জমিদারবাড়ী মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটের পথ।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে রয়েছে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল ৭:৩০), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর ০১:১৫), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকেল ০৪:৪৫), ব্রহ্মপুত্র (সন্ধ্যা ০৬:১৫) এবং হাওর এক্সপ্রেস (রাত ১০:১৫)। এসব ট্রেন সরাসরি ময়মনসিংহ শহরে যায়। শ্রেণিভেদে ভাড়া ১২০ থেকে ৫০১ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে আসার জন্য রয়েছে বিজয় এক্সপ্রেস (সকাল ৯:১৫)। এই ট্রেনটি ক্ষণিকের জন্য আঠারবাড়ী রেল স্টেশনে দাঁড়ায়।
এ ছাড়া যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা যাবে আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজের নিরাপত্তাকর্মী মো. আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি সার্বক্ষনিক সেখানে অবস্থান করেন। তার ফোন নম্বর-০১৬১১৬৩৬৪৩৫।