এক বাহুবিশিষ্ট অদ্ভুত সর্পিল গ্যালাক্সি বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে

ফিচার ডেস্ক
  ১৯ মে ২০২৫, ২৩:৪০

মহাকাশ গবেষণার জগতে আবারও একটি চমকপ্রদ বিষয় সামনে আনলো বিজ্ঞানীরা। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি একটি অসাধারণ ছবি তুলেছে, যেখানে 'এনজিসি ৪৬৮৯' নামের একটি স্পাইরাল বা সর্পিল আকৃতির গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে।
এই গ্যালাক্সিটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, 'কোমা বেরেনিসেস' নক্ষত্রমণ্ডলীতে অবস্থিত। কিন্তু এটি সাধারণ স্পাইরাল গ্যালাক্সির মতো নয়। এর বিশেষত্ব হলো এর অদ্ভুত গঠন—এটির মাত্র একটি স্পষ্ট বাহু রয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মাথা ঘামাতে বাধ্য করছে।
সাধারণত স্পাইরাল গ্যালাক্সিগুলোর একাধিক বাহু থাকে, যা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সমান্তরালভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু 'এনজিসি ৪৬৮৯'-এর ক্ষেত্রে এমনটি নয়। এর একটি বাহু খুবই উজ্জ্বল ও স্পষ্ট, অন্য বাহুগুলো অনেক ম্লান।
এই কারণে বিজ্ঞানীরা এটিকে 'অ্যানিমিক গ্যালাক্সি' বা 'দুর্বল গ্যালাক্সি' বলে অভিহিত করেছেন। এই গ্যালাক্সিতে তারাগুলোর জন্মের হারও খুব কম, যা এটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
হাবলের 'ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩' দিয়ে তোলা এই ছবিতে দৃশ্যমান আলো এবং ইনফ্রারেড আলোর সমন্বয় করা হয়েছে। এর ফলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় উজ্জ্বল অংশ এবং এর ম্লান বাহুগুলোর বিশদ বিবরণ স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
ছবিটি দেখে বিজ্ঞানীরা বিস্মিত কারণ, এত কাছের একটি গ্যালাক্সি এমন অস্বাভাবিক গঠন নিয়ে তাদের কাছে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই অদ্ভুত এক বাহুবিশিষ্ট গঠনের পেছনে অন্য গ্যালাক্সির সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া দায়ী হতে পারে। মহাকাশে গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় টান কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এই টানের ফলে 'এনজিসি ৪৬৮৯'-এর বাহুগুলোর মধ্যে একটি বেশি উজ্জ্বল এবং অন্যগুলো ম্লান হয়ে গিয়ে থাকতে পারে।
তবে এই ধারণা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। গ্যালাক্সির এমন আচরণের পেছনের সঠিক কারণ জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
'এনজিসি ৪৬৮৯' আমাদের কাছে তুলনামূলকভাবে কাছের একটি গ্যালাক্সি হলেও এটি মহাকাশের বিবর্তন সম্পর্কে অনেক অজানা রহস্য উন্মোচন করছে। হাবলের এই নতুন ছবি বিজ্ঞানীদের কেবল মুগ্ধই করেনি, বরং গ্যালাক্সির গঠন ও বিবর্তন নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করেছে।
মহাকাশের এই বিস্ময় আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা যতই এগিয়ে যাই, মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনের পথে এখনো অনেক দূর বাকি।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ