শ্রীমঙ্গলের মেয়েরা কেন সুন্দরী!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪০

ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, শীতের সময় এলেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রবাসী পাত্র আর ঘটকদের আনাগোনা বাড়ত সুন্দরী পাত্রীর খোঁজে। সে সময় থেকেই বিভিন্ন জনের মুখে শুনতাম, “শ্রীমঙ্গলের মেয়েরা নাকি সুন্দরী।” বিষয়টা নিয়ে আগে তেমন ভাবিনি।
সম্প্রতি কয়েকজন প্রবাসী তাদের আত্মীয়স্বজনের বিয়ের আয়োজন করতে দেশে যাচ্ছেন। আমাকে তারা প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেছেন—শ্রীমঙ্গলে আমার পরিচিত কোনো মেয়ে আছে কি না। আমি কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম, শ্রীমঙ্গলই কেন? উত্তরে তারা একবাক্যে বললেন—“শ্রীমঙ্গলের মেয়েরা নাকি সুন্দরী, স্মার্ট আর অতিথিপরায়ণ।”
বিষয়টি নিয়ে একটু খোঁজখবর করলাম। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত দেওয়ান গোলাম মরতজা সম্পাদিত (সংগ্রাহক ও সংকলক: আম্বিয়া খাতুন) ‘ছিলটে প্রচলিত পই-প্রবাদ ডাক-ডিঠান’ গ্রন্থে একটি প্রবাদ পাওয়া যায়: “সাতগাঁও বালিশিরা, মাইঝে মাইঝে ছড়া, বেটি গুইন সুন্দর-সান্দর, বেটা গুইন মরা।”
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সাতগাঁও ও বালিশিরা অঞ্চলে অনেক ছড়া–নদী বয়ে গেছে। এ অঞ্চলের মেয়েরা সুন্দরী ও সুগঠিত, তবে ছেলেরা হয় হেংলা–পাতলা গড়নের। প্রবাদটি স্থানীয় মানুষের দেহকাঠামো ও রূপের বাস্তব বর্ণনা তুলে ধরে। গবেষকেরা ধারণা করেন, প্রাকৃতিক আবহাওয়ার প্রভাব বা কোনো এক অতীতে উপজাতীয় রক্তের মিশ্রণ এর কারণ হতে পারে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মানুষের দেহের গড়ন, উচ্চতা, রং, মেজাজ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলের ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়া দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে আলাদা। ৪৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার বালিশিরা ও সাতগাঁও অঞ্চলের মাটি বালিযুক্ত, ভূনবীর ও মির্জাপুরের মাটি পলিযুক্ত। এখানে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়, বিশাল জলরাশির হাইল হাওর, নদী–নালা, খালবিল, লেক, সবুজ চা–বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাবার বাগান ও আনারসের বাগান। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় এখানে, আবার শীতকালে থাকে প্রচণ্ড শীত। খাসিয়া, মনিপুরি, সাঁওতালসহ নানা আদিবাসীও বসবাস করেন এখানে।
আশির দশকে দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘বন্ধু’ ছবিতে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সত্য সাহার সুরে একটি গানেও সিলেট অঞ্চলের মেয়েদের সৌন্দর্যের উল্লেখ ছিল। আঞ্চলিক গান, ধামাইল ও ডিঠানেও এ প্রসঙ্গ পাওয়া যায়।
বালাগঞ্জের লেখক ও সমাজসংস্কারক রজনীকান্ত মহাশয় তার এক পত্রে ছোট ভাইকে লিখেছিলেন— “অরবিন্দ, শ্রীমঙ্গলের শিবরাত্রির মেলায় গেলে দেখবে, মেলায় অনেক মেয়েছেলে আসবে। আমাদের শৈলেনের জন্য একটা সুন্দরী পাত্রী যদি পাওয়া যায়, তবে আসছে ফাল্গুনেই বিয়ের লগ্নটা ধরতে চাই।”