একের পর এক বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাচ্ছে, চেনেন তাকে?

ফিচার ডেস্ক
  ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২২:৩৯

করোনা থেকে শুরু করে সম্প্রতি জাপানের সুনামির ভবিষ্যদ্বাণী ৩০ বছর আগেই করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা। মিলে গেছে তার করা একের পর এক ভবিষ্যদ্বাণী। তার মুখের কথা নাকি একবারে অব্যর্থ। ফরাসি দার্শনিক তথা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নস্ট্রাদামুসের সঙ্গে উচ্চারিত হয় বুলগেরিয়ার ‘বাবা ভাঙ্গা’র নাম।
একের পর এক শোরগোল ফেলা সব ভবিষ্যদ্বাণী করে তিনি জনপ্রিয়তার শিখরে। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই পৃথিবী ও তার অধিবাসীদের জন্য রেখে গেছেন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী। কিন্তু কে এই বাবা ভাঙ্গা, কি তার পরিচয়। কীভাবেই বা এমন নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।
বাবা ভাঙ্গা নামের এই নারী ছিলেন একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জন্মান্ধ ছিলেন না, ১২ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় দুই চোখের দৃষ্টি হারান তিনি। জানা যায়, ঝড়ে নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধারকালে চোখে ধুলা ও ময়লা ছিল, ফলে চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টি ফিরে পায়নি। তা সত্ত্বেও একের পর এক ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারিত হয়েছে তার মুখে। এমনকি তার করা ভবিষ্যদ্বাবাণীর বেশিরভাগই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি বর্তমান উত্তর ম্যাসেডোনিয়ায় অবস্থিত স্ট্রুমিকা শহরের কাছে জন্মগ্রহণ করেন, তখনকার ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। জীবনের অর্ধেকটাই তার কেটেছে বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটিতে। তার আসল নাম ছিল ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। তবে বিয়ের পর অবশ্য নাম পরিবর্তন করে হয় ভ্যানগেলিয়া গুস্টেরোভা।
কিন্তু তাকে ডাকা হতো বাবা ভাঙ্গা। ‘বাবা’ শব্দটি বুলগেরীয় ভাষায় অর্থ ‘বৃদ্ধা নারী’ অথবা ‘ঠাকুমা’ এজন্য বয়স্ক নারীদের স্নেহ প্রকাশে এমন সম্বোধন ব্যবহৃত হয়। আর ‘ভাঙ্গা’ অংশটি এসেছে ভ্যানগেলিয়া নাম থেকে আহূত, ও নামটি বহুলভাবে প্রচলিত হয়ে ওঠে।
খুব ছোটবেলায় তার মা মারা যান। তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তিনি তার সৎমায়ের কাছে মানুষ হন। যদিও তিনি অধিকাংশ সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গেই কাটাতেন। কথিত আছে, ছোটবেলা থেকেই তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে মাঠে খেলা করে সময় কাটাতেন।
সেই সময় একটি দুর্যোগের কবলে পড়েন। ঝড়ের মধ্যে পড়ে দুদিন নিখোঁজ ছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হলে দেখা যায় বালি ও কাদা ঢুকে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হয়নি তার। ফলে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান বাবা।
১৯২৫ সালে জেমুন শহরে ভাঙ্গাকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি ব্রেল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখেন। সেখানেই তিনি পিয়ানো বাজানো, সেলাই, রান্না করা শিখেছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় যদিও চিকিৎসকরা বলেছিলেন, শিগগির তিনি মারা যাবেন। কিন্তু তিনি হঠাৎই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তার অলৌকিক ক্ষমতা জনপ্রিয় হতে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। সেই সময় অনেকেই বাবা ভাঙ্গার কাছে এসে জানতে চাইতেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন কি না! এই সময়ই তার সঙ্গে আলাপ হয় দিমিতার গোসতারভ নামে একজন সৈনিকের। তিনিও ভবিষ্যৎ জানতে বাবার কাছে আসতেন।
১৯৪২ সালে দিমিতারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর সংসার পাতেন পেটরিচে। তখন থেকে খ্যাতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এই ভবিষ্যৎকথকের। ১৯৪২ সালের ৮ এপ্রিল বুলগেরীয় শাসক তৃতীয় বোরিস এসেছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। শোনা যায়, বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা।
১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট ৮৫ বছর বয়সে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিজের ভবিষ্যদ্বাণীও নিজেই করেছিলেন এই রহস্যময়ী নারী। মৃত্যুর আগে ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস মহামারি, সবই জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর দিনক্ষণ মিলিয়ে দিয়েছিলেন। মিলিয়ে দিয়েছিলেন ৯/১১ এ নিউ ইয়র্কের সন্ত্রাসবাদী হামলাও। এমনকি চেরনোবিল বিপর্যয় এবং ব্রেক্সিটের মতো আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও যা বলেছিলেন, অলৌকিকভাবে মিলে গেছে সব।
২০২৫ সালের শুরুতেই হবে এক ভূমিকম্প, এমন আভাস দিয়ে গেছেন বাবা। এই বছর থেকেই যে পৃথিবীর শেষের সূচনা হতে চলেছে তারও আগাম ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তিনি। তবে ৫০৭৯ সাল পর্যন্ত মানব সভ্যতা সম্পূর্ণ বিলুপ্তির মুখোমুখি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া