পরিবেশবান্ধব বিকল্প দাফন প্রথা: মানবদেহ কম্পোস্টিং পদ্ধতি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১৪


মৃত্যুর পর মানুষকে কোথায় এবং কিভাবে শায়িত করা হবে—এ প্রশ্নে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত দাফন ও দাহ প্রথার বাইরে এখন নতুন সম্ভাবনা যুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। গত সপ্তাহে আইনে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম রাজ্য হিসেবে বৈধতা দিল মানবদেহ কম্পোস্টিং বা “ন্যাচারাল অর্গানিক রিডাকশন” প্রক্রিয়াকে।
প্রক্রিয়াটি যতটা আধুনিক শোনায়, আসলে তা প্রকৃতিরই ধারাবাহিকতা। খড়, আলফালফা ও অন্যান্য জৈব উপাদানের সঙ্গে বিশেষ পাত্রে রাখা দেহ প্রায় ৪৫ দিনের মধ্যেই মাটিতে পরিণত হয়। এ মাটি আবার নতুন জীবন লালন করতে পারে—ঘরের টবের গাছ থেকে শুরু করে বনের জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচলিত দাফন প্রথায় প্রচুর জমি দখল হয় এবং লাশ সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ (যেমন ফরমালডিহাইড) মাটির নিচে গিয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। অন্যদিকে দাহ প্রক্রিয়ায় প্রচুর কাঠ ও জ্বালানি ব্যবহার হয়, যা সরাসরি কার্বন নিঃসরণ বাড়ায়। মানব কম্পোস্টিং তুলনামূলকভাবে অনেক কম কার্বন উৎপন্ন করে, এবং মৃতদেহকে আবার প্রকৃতির চক্রে ফিরিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ২০২২ সালে এ প্রক্রিয়াকে বৈধ করেছিল মূলত পরিবেশগত ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে।
কোভিড-১৯ মহামারি মৃত্যুর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। প্রিয়জনের শেষকৃত্যের সময় মানুষ টের পেয়েছেন প্রচলিত পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা ও খরচের চাপ। অনেকেই তাই বিকল্প খুঁজছিলেন। মানবদেহ কম্পোস্টিং সেসব পরিবারকে একদিকে অর্থনৈতিক স্বস্তি দেয়, অন্যদিকে পরিবেশের প্রতিও দায়িত্বশীল হতে শেখায়।
নিউজার্সি ফিউনারেল ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতদিন অনেক বাসিন্দা এই সেবা নিতে অন্য রাজ্যে যেতেন বা মৃতদেহ পাঠাতেন। এখন থেকে স্থানীয় ফিউনারেল হোমগুলো আগামী ১০ মাসের মধ্যে এ সেবা চালু করতে পারবে।
প্রশ্ন উঠছে— ব্যবস্থাটি কতটা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে?
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক সম্প্রদায় এখনো দ্বিধান্বিত। ইহুদি ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যেখানে দাফনকে ঈশ্বরনির্দিষ্ট কর্তব্য হিসেবে দেখেন, সেখানে দেহকে কম্পোস্টে রূপান্তরের ধারণা তাঁদের কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে—কেউ কেউ এটিকে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে এটিকে মৃতদেহের মর্যাদা লঙ্ঘন মনে করছেন।
তবে তরুণ প্রজন্মের একাংশের কাছে বিষয়টি অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত ও ভবিষ্যতমুখী। তাঁদের যুক্তি—প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এ পথ মৃত্যু-পরবর্তী জীবনবোধের নতুন মাত্রা যোগ করে। এক নিউজার্সি বাসিন্দা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের প্রিয়জন যদি চলে যাওয়ার পরও পৃথিবীকে বাঁচাতে সহায়তা করেন, তবে সেটিই হবে সর্বোত্তম স্মৃতি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। মৃত্যুর পর মানুষ শুধু বিদায়ই দেবে না, বরং পৃথিবীর মাটিকে নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত করে যাবে—এ ধারণা এক নতুন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিচ্ছে।