যে কারণে হাঙ্গেরির শতাধিক পুরুষকে হত্যা করেছিল তাদের স্ত্রীরা

ফিচার ডেস্ক
  ০১ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫৭


১৯২৯ সালের ডিসেম্বর, হাঙ্গেরির ছোট শহর সলনোকের স্থানীয় আদালতে এক বিচারের কার্যক্রম শুরু হয়। মামলাটি কেন্দ্র করেছিল নাগিরেভ গ্রাম, যেখানে কয়েক ডজন নারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল স্বামীদের ইচ্ছাকৃতভাবে আর্সেনিক দিয়ে হত্যা করার জন্য।
নিউইয়র্ক টাইমস সেই সময়ে জানিয়েছিল, প্রায় ৫০ জন নারী এ অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। ১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে বুদাপেস্ট থেকে ১৩০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এই গ্রামে ৫০ জনেরও বেশি পুরুষকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। অভিযুক্ত নারীরা ‘এঞ্জেল মেকার’ নামে পরিচিত হন, যা এমন নারীদের বোঝায় যারা স্বামী বা অবাঞ্ছিত শিশুকে হত্যা করে।
বিচারের সময় বারবার উঠে আসে ঝুঝানা ফাজেকাশের নাম। তিনি ছিলেন গ্রামের ধাত্রী ও প্রাকৃতিক চিকিৎসক। স্থানীয়দের দাবি, ফাজেকাশের কাছ থেকে নারীরা আর্সেনিক সংগ্রহ করতেন এবং তা ঘরে বসেই প্রস্তুত হতো। তিনি প্রায়শই বলতেন, যদি তাদের সঙ্গে থাকা কঠিন হয়, আমার কাছে একটি সহজ সমাধান আছে। 
নাগিরেভ ছিল একটি ছোট কৃষি বসতি, যেখানে বিয়ের নিয়ম কঠোর ছিল এবং নারীদের ওপর পুরুষদের নিয়ন্ত্রণ প্রচুর। ১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ জন পুরুষের মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ সন্দেহজনক মনে করে মৃতদেহ উত্তোলন করে। পরীক্ষা শেষে ৪৬টি মৃতদেহে আর্সেনিক পাওয়া যায়। 
ফাজেকাশকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বাড়িতে যায়। কিন্তু তিনি নিজেই বিষ গ্রহণ করে আত্মহনন করেছিলেন। এরপর ১৯২৯ সালে সলনোকে ২৬ জন নারীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড, সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দারিদ্র্য, লোভ, বিয়ে সংক্রান্ত চাপ এবং স্বাধীনতার অভাবকে মূল কারণ হিসেবে দেখা হয়। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরুষদের অনুপস্থিতিতে নারীরা রাশিয়ান যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন; স্বামীদের ফিরে আসার পর তারা নিজেদের স্বাধীনতা হারানোর প্রতিক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
নাগিরেভের বাইরে, নিকটবর্তী টিজাকুর্টেও আর্সেনিক পাওয়া গেছে, যদিও সেখানকার কোনো নারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। অনুমান করা হয়, এই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৩০০-এরও বেশি হতে পারে।
অবশেষে এই ঘটনায় নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। মারিয়া গুনিয়ার মতে, বিষক্রিয়ার ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর স্বামীদের আচরণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গিয়েছিল।