চট্টগ্রামে জলাতঙ্কের টিকা বন্ধ, হুমকির মুখে রোগীর জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৪ জুন ২০২৫, ১২:০৫

পশু-প্রাণী কামড়ালে বা আঁচড় দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন হয় জলাতঙ্কের টিকা। জলাতঙ্কের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে কামড়ানোর প্রথম দিন থেকে পর্যায়ক্রমে চারটি টিকা নিতে হয় রোগীকে। তবে সময়মতো টিকা না নিলে এ ভাইরাস দ্রুত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে মারাত্মক স্নায়ু প্রদাহ। এতে শরীরে নানা জটিলতার আশঙ্কা থাকে। হুমকিতে পড়তে পারে রোগীর জীবনও। তবে চট্টগ্রামে রোগীর প্রাণ রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি এই জলাতঙ্কের টিকা সরকারিভাবে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে টিকা নিতে না পারায় হুমকিতে পড়ছে অনেকের জীবন। 
সরকারিভাবে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি জেলার ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এই টিকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভরসার এই জেনারেল হাসপাতালে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে টিকা সরবরাহ। সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেক রোগীকে। হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ জনের মতো রোগীর টিকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় কাউকে এখন টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 
একাধিকবার চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা থেকে কোনো টিকা আসেনি। এই অবস্থায় বিভিন্ন পশু-প্রাণীর কামড় খেয়ে অনেক রোগী দূরদূরান্ত থেকে জেনারেল হাসপাতালে ছুটে এলেও পাচ্ছেন না টিকা নেওয়ার সুযোগ। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বাড়তি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টিকা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এ হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ রোগীই গরিব-অসহায়, যাদের পক্ষে টাকা দিয়ে টিকা কেনা অনেকটা কঠিন। তাই সঠিক সময়ে টিকা নিতে না পেরে হুমকিতে পড়ছে অনেকের জীবন। চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুর, বিড়াল, গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক ছড়ায়। সময়মতো টিকাদানই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকরী উপায়।
হাসপাতালের তথ্যমতে, কোনো কারণ না জানিয়েই গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ ঢাকা থেকে জলাতঙ্ক টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় নানাভাবে কিছু টিকা সংগ্রহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সামান্য কিছু টিকা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কোনো টিকা আসেনি। 
জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পাশে টিকা দেওয়ার রুমের সামনে লেখা, ‘জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ। রোগীদের বাইরে থেকে টিকা কিনতে হবে।’ 
সরেজমিন দেখা যায়, মহানগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে অনেক রোগী পশুর কামড় খেয়ে টিকা নিতে এখানে ছুটে এসেছেন। তাদের কারও পায়ে, কারও হাতে, আবার ঘাড়েও কামড়ের দাগ দেখা যায়। তাদের অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও টিকা না দিতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন। এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগী ও স্বজন। 
কুকুরের কামড় খাওয়া ছেলেকে নিয়ে আসা দিনমজুর এখলাছুর রহমান বলেন, বাসায় যাওয়ার পথে ছেলেকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। কিন্তু এখানে নাকি টিকার সরবরাহ নেই। বাইরে থেকে টিকা কিনে আনতে বলছে তারা। কিন্তু আমার পক্ষে তো কেনা অসম্ভব। 
জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, কোনো কারণ না জানিয়েই হুটহাট টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাঁচ হাজার টিকার চাহিদা পাঠালে দেওয়া হয় মাত্র ৫০০ থেকে ৭০০টি। এতে প্রতিদিনের বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। 
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আকরাম হোসেন বলেন, পশু-প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত প্রচুর সংখ্যক রোগী প্রতিদিন আমাদের এখানে টিকার জন্য আসেন। কিন্তু অনেকদিন ধরে সরকারিভাবে টিকার সরবরাহ নেই। তাই আমাদের পক্ষে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। 
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, জলাতঙ্ক রোগের টিকা না নিলে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। জলাতঙ্কের টিকা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সর্বাধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিকার সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে নিতে হবে ইমিউনোগ্লোবুলিনের টিকাও। কোনো রোগী যদি টিকার সম্পূর্ণ কোর্স না নেন তাহলে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।