রংপুর মেডিক্যালে মর্গের নির্জনতা ভেঙে চিৎকার! হঠাৎই নেমে এল চাঞ্চল্য। বরফে মোড়ানো, পলিথিনে ঢাকা মৃতদেহ যখন স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য তোলা হলো, তখন দেখা গেল লাশের দুটি চোখ নেই! ক্ষুব্ধ পরিবার বলছে—‘লাশ ঢাকা ছিল কাঁথা ও পলিথিনে, তাহলে চোখ গেল কোথায়? অন্যদিকে মর্গ কর্তৃপক্ষের যুক্তি—‘সম্ভবত ইঁদুর বা অন্য কোনো প্রাণী খেয়ে ফেলেছে।’
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে থেকে মৃত মানুষের চোখ চুরির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৮ মে) বিকেলে এই অভিযোগ করেন স্বজনরা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, রংপুর মহানগর পরশুরাম থানার বুড়িহাট বাহাদুর সিং মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা মাসুম আলী।
পারিবারিক দ্বন্দ্বে শ্যালক আবু সাইদের সঙ্গে মারামারিতে মঙ্গলবার গুরুতর আহত হন তিনি। ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লাশটি রাখা হয় হাসপাতালের মর্গে। বুধবার সকালে পোস্টমর্টেমের সময় সংশ্লিষ্টরা দেখতে পান মরদেহের দুটি চোখ নেই। বিষয়টি জানানো হয় স্বজনদের।
এই নিয়ে শুরু হয় হৈচৈ। এ ঘটনার জন্য মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ি করে বিচার দাবি করেছেন মৃতের স্বজনরা।
স্বজনরা বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাই। লাশটি রাখা অবস্থায় চিকা বা ইঁদুর নাকি চোখ নিয়ে গেছে। উনারা যে যুক্তি দিচ্ছেন তা মানা সম্ভব নয়।
আরেকজন স্বজন বলেন, ‘আমার দাদাকে তার শ্যালক মেরে ফেলছে। এ জন্য আমরা মামলা করি, সে মামলার কারণেই লাশটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজে মর্গে পোস্টমর্টেম জন্য গতকাল মঙ্গলবার আনা হয়। গতকাল আমরা লাশটি ঠিকমতো বরফ, পলিথিন ও কাঁথা দিয়ে ঢেকে রেখেছি।
আজকে এসেছি লাশ নেওয়ার জন্য এসে দেখি লাশের দুই চোখ নেই। আমরা এটা কিভাবে মেনে নেব, চোখ কিভাবে থাকে না। লাশটা দেখাই যাচ্ছে ঠিকমতো ঢাকা আছে পলিথিন ও কাঁথা দিয়ে মোড়ানো আছে সেখান থেকে কীভাবে লাশের চোখ থাকে না?’
তারা বলেন, এদেরকে বলার পর এরা বলছে চিকা খেয়ে ফেলছে। কিন্তু চিকা কীভাবে খাবে? আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
রংপুর মেট্রোপলিটন পরশুরাম থানার সাব ইন্সপেক্টর হানিফ বলেন, গতকাল আমি লাশ সুরতহাল করেছি স্বাভাবিক ছিল। এখন এসে দেখি লাশের দুইটা চোখেই নাই। যারা সরদার এখানকার তারা বলতেছে ইঁদুর বা অন্য কিছু পোকামাকড় খেয়ে ফেলতে পারে। এটি পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে পাওয়া যাবে যে, আসলে এটি মানুষ তুলেছে না পোকা অথবা ইঁদুর খেয়ে ফেলছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আসলে এটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু এই ব্যাপারটি একটি রুমের ভেতরে থাকে, রুমের ভেতর থাকা অবস্থায় এই ঘটনাটি হয়েছে। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে এবং ভালোভাবে তদন্ত না করে সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না। এর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’