ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কাশ্মির, পাঞ্জাব এবং গুজরাটসহ অন্তত ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার (৭ মে) দিনগত রাত ও বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালের দিকে এই হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে এতে কোনো হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা এখনো জানায়নি নয়াদিল্লি।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব হামলার লক্ষ্য ছিল শ্রীনগর, পাঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড়সহ অন্যান্য জায়গার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো। তবে এই হামলা প্রতিহত করার দাবি জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ভারত সরকারের দাবি, পাকিস্তানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে ভারতও লাহোরসহ পাকিস্তানের অন্তত ৯টি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। এর মধ্যে একাধিক রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতের পাল্টা হামলায় ভারত মাত্র ২৫ মিনিটে পাকিস্তানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে এবং রাতভর ডজনখানেক ড্রোন হামলা চালায়।
ভারতের সামরিক বাহিনী জানায়, পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে তারা রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে। একই সঙ্গে হামলার জবাবে ‘হারপি’ ও ‘হারোপ’ নামের আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
এদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ভারতের ছোড়া অন্তত ২৫টি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, লাহোরের কাছে এক সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ড্রোন হামলায় চার সেনা আহত হয়েছেন। এছাড়া সিন্ধু অঞ্চলে ভারতীয় ড্রোন হামলায় একজন বেসামরিক নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।
লাহোর শহরজুড়ে বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করছে দুই দেশের সেনাবাহিনী।
ভারতের ৪০-৫০ সেনাকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের মন্ত্রীর
নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের ৪০ থেকে ৫০ সেনাকে হত্যা করেছে পাকিস্তান। দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লা তারার এই দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন রয়টার্সের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের সামরিক স্থাপনাও উড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা শতাধিক। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে করা বৈঠকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। পহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায় ভারত।
রাজনাথ সিং আরও জানিয়েছেন, ভারতের এই অপারেশন চলমান। অর্থাৎ যে কোনো হামলার জবাব দিতে দেশটি প্রস্তুত।
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাতভর গোলাগুলি
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে রাতভর আবারও গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, উরি ও আখনূর এলাকার উল্টোদিকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে ছোট অস্ত্র থেকে গুলি এবং কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। ভারতীয় সেনারা এর জবাব দিয়েছে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে গোলাগুলির বিষয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এদিকে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে ওই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রয়টার্স এবং জিও টিভি এ তথ্য নিশ্চিত করে। তবে কী কারণে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বা এ থেকে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
মূলত ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে ভারত। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ শুরু থেকেই তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। পহেলগামে হামলার দুই সপ্তাহ পর পাকিস্তানের নয় স্থানে হামলা চালিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ওই হামলার জবাবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর এই প্রথম পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এত বড় সামরিক সংঘর্ষ ঘটলো।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে অন্তত ১২টি দেশের কূটনীতিকদের জানিয়েছে, পাকিস্তান যদি জবাব দেয়, তাহলে ভারতও আবার পাল্টা জবাব দেবে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
পাকিস্তান কেবল ভারতের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে: প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে অন্তত ১২টি দেশের কূটনীতিকদের জানিয়েছে, পাকিস্তান যদি জবাব দেয়, তাহলে ভারতও আবার পাল্টা জবাব দেবে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা নয়টি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে—যার মধ্যে কয়েকটি গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলায় ২৫ পর্যটক ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা নিহতের ঘটনায় জড়িত বলে দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে, এই হামলা ও সীমান্তে গোলাবর্ষণে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গত রাতে ভারত যে ভুল করেছে, তার মূল্য দিতে হবে। তারা হয়তো ভেবেছে আমরা পিছু হটবো, কিন্তু তারা ভুলে গেছে—এটা সাহসী মানুষের জাতি।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ভারতীয় বেসামরিক জনগণ নয়, কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই পাল্টা আঘাত হানবে পাকিস্তান।
পাকিস্তান জানায়, ভারতের হামলায় ছয়টি স্থান লক্ষ্যবস্তু করা হয়। কিন্তু সেগুলোর কোনোটি ‘সন্ত্রাসী শিবির’ ছিল না।
হামলার সময় পাকিস্তানের আকাশে ৫৭টি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ছিল, যেগুলোতে হাজারো যাত্রী ছিলেন—সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের উড়োজাহাজ ছিল এসবের মধ্যে।
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে এক মসজিদ ও মাদ্রাসায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যেখানে তিনজন নিহত হন। স্থানীয়দের ভাষ্য, এই ভবনে আবাসিক অংশও ছিল। ভারতীয় এক সূত্র দাবি করেছে, সেটি ছিল ‘সন্ত্রাসীদের শিবির’। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, সব লক্ষ্যবস্তুই বেসামরিক ছিল।