‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র চাইতে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন জেলেনস্কি  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৪৪

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আজ শুক্রবার বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বৈঠকে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার ভেতর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের দাবি তুলবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বৈঠকটি এমন এক সময় হচ্ছে, যখন একদিন আগেই ট্রাম্প জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ফোনালাপে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়েছে এবং তারা শিগগিরই হাঙ্গেরিতে সরাসরি সাক্ষাতে বসতে সম্মত হয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি পর এটি ছিল পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম কথা, এবং আলোচনাটি ‘খুবই ফলপ্রসূ’ ছিল। তিনি আরও জানান, ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবেন।
মার্কিন সফরে এসে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মস্কো যতবার টমাহকের নাম শোনে, ততবারই দ্রুত আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখায়।’ এটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তার তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার উন্নত টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন। সপ্তাহের শুরুতে এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দেখা যাক… হয়তো দেব।’
তবে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প কিছুটা সতর্ক অবস্থান নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের টমাহকের মজুত শেষ করে ফেলতে পারি না। এগুলোর প্রয়োজন আমাদেরও আছে, তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় তারা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন—যুদ্ধ শেষ হলে সেই বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে। তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা এক অনির্দিষ্ট স্থানে বৈঠক করবেন, যেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নেতৃত্ব দেবেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত জানাবেন এবং দাবি করেন, ‘আজকের কথোপকথনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করছেন।
যদিও ট্রাম্প অতীতে রাশিয়ার প্রতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল অবস্থান দেখিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার মনোভাব পুতিনের প্রতি কঠোর হয়েছে। আগস্টে আলাস্কায় সরাসরি এক সম্মেলনের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প, তবে বৈঠকটি তেমন কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি। কয়েক দিন পর জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালেই ট্রাম্প পুতিনকে ফোন করেন।
শুক্রবার পুতিন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গেও কথা বলেন। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের বিস্তারিত অরবানকে অবহিত করেন। অরবান বুদাপেস্টে সম্ভাব্য ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দেন।
অরবান এক্স-এ লিখেছেন, ‘বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদের জন্য এটি দারুণ খবর,’ এবং জানান তিনি ট্রাম্পের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরবান বলেন, রুবিওর বৈঠকের এক সপ্তাহ পর ট্রাম্প-পুতিনের আরেক দফা আলোচনা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধপন্থি, তাই এই শান্তি প্রক্রিয়া থেকে তাদের বাদ পড়া যৌক্তিক।’
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়া ইউক্রেনে বছরের অন্যতম বড় আক্রমণ চালায়। ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ওলগা স্তেফানিশিনা জানান, এই হামলায় অন্তত ২৮টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৩২০টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘পুতিনের ফোনালাপের আগেই রাশিয়ার এই হামলা মস্কোর শান্তি নিয়ে প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ করে।’