বিশ্বের ১০০ লিড কারখানার মধ্যে ৬৮টিই বাংলাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৫১

চলতি বছর দেশের ৩৬টি কারখানা আন্তর্জাতিক পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেয়েছে। যা এক বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালে ৩০টি কারখানা এ সনদ পেয়েছিল। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে এই সনদ পেয়েছে কারখানাগুলো। এর মধ্যে ২২টি কারখানা পেয়েছে ‘লিড প্লাটিনাম’ সনদ।এটি পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। তাদের দেওয়া সনদ ‘লিড’ নামে পরিচিত।
লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এই সনদ পেতে প্রতিটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে মান রক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ এই সনদ পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে সব সময় একই শর্ত থাকে না, সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়।
ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে নয়টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানিসাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
এর পাশাপাশি সনদের আলাদা সংস্করণও থাকে। মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০-র বেশি নম্বর পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ নম্বর পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৬৮টি লিড সার্টিফায়েড কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ১১৪টি প্লাটিনাম এবং ১৩৫টি গোল্ড সনদপ্রাপ্ত। বাকি ১৯টি কারখানার মধ্যে সিলভার সনদপ্রাপ্ত কারখানা ১৫টি এবং সার্টিফায়েড সনদপ্রাপ্ত কারখানা চারটি। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া এলইইডি (লিড) কারখানার মধ্যে ৬৮টিই বাংলাদেশে অবস্থিত।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত আজ বৈশ্বিকভাবে টেকসই শিল্পায়নের মানদ- স্থাপন করেছে। এই অর্জন আমাদের পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের প্রতিশ্রুতিকে আরো দৃঢ় করেছে। এই সাফল্য দেশের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব নীতির প্রতি অঙ্গীকারকে আরো সুদৃঢ় করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অর্জন শুধু সবুজ বিনিয়োগের প্রতিফলন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে এক বড় পদক্ষেপ। বর্তমানে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে বাংলাদেশকে বিশ্বের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সবুজ কারখানার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আরো প্রতিযোগিতামূলক ও ভবিষ্যিনর্ভর হয়ে উঠছে, যা বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো মজবুত করবে।