
২০১৯ সালের পর আবারও ইরান জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে দেশটিতে নতুন দামে পেট্রোল বিক্রি শুরু হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় তেলের দাম তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে সস্তা জ্বালানি ভর্তুকি দিয়ে আসছিল, কিন্তু এখন সরকার সেই ভর্তুকি ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। শনিবার থেকে নতুন দামে পেট্রোল বিক্রি শুরু হয়েছে, যা ২০১৯ সালের বিতর্কিত দাম বাড়ানোর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সালে হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ৩০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারান।
ইরানে সস্তা পেট্রোল অনেক প্রজন্ম ধরে এক ধরনের "জন্মগত অধিকার" হিসেবে গণ্য হলেও এখন শাসকগোষ্ঠী কঠিন অর্থনৈতিক চাপের মুখে। অবমূল্যায়ন হওয়া মুদ্রা এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারের জন্য ভর্তুকি চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সস্তা পেট্রোল সরবরাহ করা হচ্ছে।
নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রথম ৬০ লিটার পেট্রোল আগের মতো ভর্তুকি মূল্যে ১৫ হাজার রিয়াল দরে বিক্রি হবে। এরপর ১০০ লিটার পর্যন্ত পেট্রোলের দাম হবে ৩০ হাজার রিয়াল, আর তার বেশি কিনতে হলে প্রতি লিটার ৫০ হাজার রিয়াল দাম গুনতে হবে।
এই ঘোষণার পর কিছু স্থানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল, তবুও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাশিয়ার পর ইরান বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জ্বালানি ভর্তুকি প্রদান করেছে, যা প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ভর্তুকি বাজেট ঘাটতি কমাতে বা মূল্যস্ফীতি থামাতে কিছুই করতে পারেনি। বর্তমানে ইরানে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ৪০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ বলেছেন, এই পদক্ষেপটি জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা পরিবর্তন করার একটি সূচনা মাত্র। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইরানিদের সামনে যেকোনো ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।