বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে এই প্রতিশ্রুতিতেই পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। কিন্তু পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ শুরুর আগেই বিএনপি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। কাকরাইল মোড় দিয়ে গাড়িতে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নির্ধারিত বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সমাবেশে যাচ্ছিল। তখন সেখানে ওতপেতে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মরণকামড় দিতে চায় বিএনপি। এজন্যই তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে আবারও সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না। বরাবরের মতো এবারও তাদের কথিত আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
পুলিশ বাধা দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পাশ্ববর্তী অডিট ভবনে ঢুকে গাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয়। অপর একটি গ্রুপ বিপরীতে দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। ফটকের নামফলক ভেঙ্গে ফেলে, ভিতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ এগিয়ে আসলে কৌশল বদল করে অপর পাশে ‘জাজেস কমপ্লেক্সে’ ঢুকে পড়ে ভাংচুর করে। আরেকটি গ্রুপ কাকরাইল পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এগুলো সবই ছিল একটি সংঘবদ্ধ পরিকল্পনার অংশ।
বিএনপির সহিংসতা যে পূর্বপরিকল্পিত তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তারা জেদ ধরেছিল পল্টনেই সমাবেশ করবে। কারণ তারা চেয়েছিল অরাজকতা সৃষ্টি করে ছোট ছোট অলিগলি দিয়ে দ্রুত পালাতে পারবে। পুলিশ খোলা মাঠে গোলাপবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের করতে বলেছিল। কিন্তু তারা সেখানে যায়নি,উল্টো গো ধরেছিল পল্টনেই করবে। কিন্তু এটা ছিল তাদের ষড়যন্ত্রের দুরভিসন্ধি। তারা পল্টনের অলিগলি ব্যবহার করে যা করতে চেয়েছিল,সেটাই ২৮ অক্টোবর করতে পেরেছে। ঢাকা শহরে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে দখল করার পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-বিএনপির। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে না পেরে আবারও সহিংসতার পথকেই বেছে নিয়েছে দলটি।
বিএনপি-জামায়াতের হামলায় সবচেয়ে বেশি টার্গেটকরা হয়েছে পুলিশ ও গণমাধ্যমকে। দুর্বৃত্তদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়া হামলা সহিংসতার তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে ২১ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন। গণমাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে পুলিশ কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম পারভেজকে কিভাবে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
এমন নৃশংস বর্বরতা কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হতে পারে না। যুদ্ধক্ষেত্রেও হাসপাতালে হামলা করা হয় না, কিন্তু সেদিন বিএনপি-জামায়াতের হামলা থেকে রেহাই পায়নি রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল। সেখানে আগুন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসময় হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে গেলে তাদের ঢুকতে বাধা দেয় বিএনপির দুর্বৃত্তরা। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও। ফায়ার ফাইটারদের মারধর করে গাড়ি থেকে বের করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
বিএনপির পুরনো ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু যে জামায়াত সেটা আবারও একবার প্রমাণিত হলো। বিএনপিকে সহায়তা করার জন্য গর্তের মধ্য থেকে উঠে এসেছে জামায়াত। বিএনপির পাশে থেকে তারা সহিংসতায় প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবন ও হাসপাতালে বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তরা যৌথভাবে আক্রমণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামী যেহেতু অনিবন্ধন একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের আন্দোলন করার সুযোগও সীমিত, সেজন্য তারা চেয়েছিল বিএনপির উপর ভর করে দেশে একটি নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। তাতে জামায়াতের দুইটি লাভ। প্রথমত ধ্বংসাত্মক কাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করা, দ্বিতীয়ত সব রকমের দোষ দিয়ে পড়বে বিএনপির উপর। তাদের নেতাকর্মীরা নিরাপদ দুরত্বে থাকতে পারবে। জামায়াত সবসময়ই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার ওস্তাদ।
বিএনপি-জামায়াত ২৮ অক্টোবর তারিখটা বেছে নেওয়ার কারণ ১৭ বছর পূর্বে ২০০৬ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কবর রচিত হয়েছিল। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। জারি হয় জরুরি অবস্থা। ক্ষমতা দখল করে ১/১১ অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি-জামায়াত সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে ২৮ তারিখই বেছে নিয়েছিল। এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে ঢাকা দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেদিনের আওয়ামী লীগের দাবি আর আজকের বিএনপির দাবির মধ্যে কোনো সাদৃশ্য নেই। এবং পরিস্থিতিও ভিন্ন।মূর্খরা জানেনা, ইতিহাস বারে বারে একই পন্থায় ফিরে আসে না।
বিএনপি ও জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের ইতিহাস নতুন নয়। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে দেশ্যব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। সেসময় বাসে পেট্রোল বোমা মেরে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,দোকানপাট ও বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোতে হামলা করা হয়েছিল। ভাংচুর থেকে বাদ যায়নি ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ,মন্দির,গির্জা,প্যাগোডা। নির্বাচনের দিন একজন প্রিজাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং সারাদেশে ৫৮২ টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়া হয়। একই কাজ করেছিল সরকারের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে, সেসময় টানা ৯৩ দিনের হরতাল অবরোধ করেছিল বিএনপি। তখন প্রায় আড়াইশ জনকে পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা এবং সহস্রাধিক মানুষকে আহত করা হয় ।তারা অনেকে এখনও অগ্নিদগ্ধের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। সেসময়ও দুর্বৃত্তদের টার্গেট ছিল সরকারি স্থাপনাসমূহ। তখন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে জনগণ থেকে দূরে সরে যায়। এরপর থেকে সরকার পতনের লক্ষ্যে আর হরতাল দিতে পারেনি। এমনকি বেগম জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে গেলেও হরতাল দেওয়ার সাহস করেনি দলটি।
বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ড দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের আদালতেও প্রতিষ্ঠিত। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির এক নেতার নাগরিকত্বের আবেদনের প্রেক্ষিতে বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। এজন্য বিএনপি নেতার আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে কানাডার আদালত।
বিএনপি-জামায়াত আবারো হরতাল ও অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কিন্তু এটি এখন আন্দোলনের একটি অকার্যকর অস্ত্র। মানুষ আর হরতালকে পছন্দ করে না। সহিংসতা,জ্বালাও পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে বিএনপিই হরতালের মতো আন্দোলনের কার্যক্রমকে অকার্যকর করেছে। দীর্ঘদিন পর আবার হরতালের নামে মানুষ হত্যা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার মতো কর্মসূচি বিএনপিকে আরো অজনপ্রিয় করে তুলবে। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী হরতালে কাউকে বাধ্য করা বা হরতালে বাধা সৃষ্টি করা, ভাংচুর করা, মারামারি করা দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শাস্তির সুস্পষ্ট বিধানও রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বারবার বলে আসছিল তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু শান্তির বদলে তাদের পুরনো সন্ত্রাসের পথই বেছে নিয়েছে। তারা ভালো করেই জানে আন্দোলন করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানোর শক্তি, সামর্থ্য ও জনপ্রিয়তা কোনোটাই তাদের নেই। এজন্যই তারা ভিন্ন পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। তারা আশা করে,যদি নাশকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে অনির্বাচিত কেউ এসে ক্ষমতা দখল করবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে মরণকামড় দিতে চায় বিএনপি। এজন্যই তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে আবারও সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয় না। বরাবরের মতো এবারও তাদের কথিত আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।