বিশ্ব শক্তির সমন্বয় এবং জাতীয় ও জাতিসংঘের পুলিশিংকে অধিকতর সক্রিয় করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে গত ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন হয়ে গেল। তৃতীয় ইউনাইটেড নেশনস চিফস অব পুলিশ সামিট (ইউএনকপস ২০২২) শিরোনামের ওই সম্মেলনে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী, পুলিশ প্রধান এবং আঞ্চলিক ও পেশাদার পুলিশ সংস্থার সিনিয়র প্রতিনিধিরা মিলিত হয়েছিলেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ৯০ টিরও বেশি দেশের মন্ত্রী ও পুলিশ নির্বাহীদের সঙ্গে এতে যোগ দেন।
জঙ্গিবাদ, নিরাপত্তা হুমকি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতির জন্য বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই গর্বিত। দক্ষ, মৃদুভাষী, বিনয়ী এবং সাহসী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আইকনিক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ সফলভাবে ইউএনকপ ২০২২ সম্মেলনে সারা বিশ্বের পুলিশ নির্বাহীদের প্ল্যাটফর্মের সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করেছেন।
আমার এই নিবন্ধটি ড. বেনজীর আহমেদের আমেরিকা সফরের ওপর আলোকপাত করছে। সব মিলিয়ে এটি পুলিশ প্রধানের একটি অসাধারণ সফর, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এটি তাঁর একটি যুগোপযোগী সফর।
তিনি এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন যখন দেশে এবং দেশের বাইরে সঠিক, খাঁটি ও যাচাইকৃত তথ্য ছাড়াই রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার যন্ত্র আইজিপির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে। তারা তাঁর ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং কোনো না কোনোভাবে বিভ্রান্তিকর, দূষিতভাবে উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই বিষয়টি আমাদের ইংরেজ প্রাবন্ধিক উইলিয়াম হ্যাজলিটের সেই বিখ্যাত উক্তিকেই মনে করিয়ে দেয়: ‘একমাত্র পাপ যা ক্ষমা করা যায় না, তা হলো ভণ্ডামি; কারণ একজন মুনাফিকের অনুতাপও ভণ্ডামি।’
নিউইয়র্কে ড. বেনজীর আহমেদ তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান এবং উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন সম্প্রদায়কে অবহিত করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কারণ এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিরোধীদের দীর্ঘ দিনের কাঙ্ক্ষিত মন্দ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এটি আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ওয়াশিংটনের অমর বাণীকে স্মরণ করিয়ে দেয়: ‘একজন মানুষ তার সহজাত স্বাধীনতার অপব্যবহার করতে পারে—এমন খোঁড়া ধারণার বশবর্তী হয়ে সেই মানুষকে তাঁর প্রাকৃতিক স্বাধীনতা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা একটি অন্যায্য এবং অযৌক্তিক ঈর্ষার নামান্তর।’
আজকে দেশের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে ড. বেনজীর আহমেদের জন্ম হয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য, জয় করার জন্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যদাতাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য। পেশাদারির বাইরে নিউইয়র্কে বাঙালি সম্প্রদায়ের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁর যুগোপযোগী বক্তৃতা আমাদের নিউইয়র্কের প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু মার্ক কুওমোর বক্তৃতার কথা মনে করিয়ে দেয়: ‘সরকার প্রায়শই জনগণের চিৎকারের আগে তদবিরকারিদের ফিসফিসিয়ে বলা কানকথায় সাড়া দেয়’।
ড. আহমেদ যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন ও নীতির কথা বলেন, তখন তিনি নাগরিক ও দেশের মঙ্গলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বৃহত্তর উন্নয়নমূলক উদ্যোগ, কর্মসূচি এবং প্রকল্পের কথা বলেন।
দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘেও ড. আহমেদ আমাদের কাছে দেশপ্রেম, গণতন্ত্র, উদারনৈতিকতা এবং উন্নয়নের অগ্রগামী নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘ কর্মজীবন কাটানো এবং অনন্য একাডেমিক প্রচেষ্টার কারণে তিনি সবচেয়ে মেধাবী সিভিল সার্ভিস অফিসারদের মধ্যে একজন, যাকে বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ কর্তৃক বহু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন-সৃষ্টিকারী সংস্কার বিষয় এবং এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত করেছে। এটা মোটেও অত্যুক্তি হবে না, যখন তিনি কথা বলেন, একজন দার্শনিকের মতো কথা বলেন, হার্ভার্ডের অধ্যাপকের মতো কথা বলেন, তিনি যখন পুলিশিং সম্পর্কে কথা বলেন, তখন তিনি উইলিয়াম ব্র্যাটনের মতো কথা বলেন। এমনকি ভবিষ্যতেও, যেমন হেলেন কেলার বলেছেন, আপনার মুখ সূর্যের আলোতে রাখুন এবং আপনি ছায়া দেখতে পারবেন না।
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি পশ্চিমা উদারতাবাদের প্রতি ড. বেনজীর আহমেদের সমর্থন সন্দেহাতীত কারণ তিনি কয়েক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন, পড়াশোনা করেছেন এবং বসবাস করেছেন। নিউইয়র্কে থাকাকালে আমরা উদারনৈতিক মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক গতিশীলতা, বৈচিত্র্য এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়ে তাঁর তীব্র অনুরাগ প্রত্যক্ষ করেছি। এর ধারাবাহিকতায় তিনি জনগণের অধিকার, সন্ত্রাসবাদ, গণতন্ত্র, উদারতাবাদ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে সংহতি ঘোষণা করেছেন।
ড. বেনজীর আহমেদ সন্ত্রাসী হামলায় হতাহত মার্কিন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল। পরস্পরের মধ্যে সহভাগ করে নেওয়া এই মূল্যবোধের কারণে বাংলাদেশ পুলিশ, যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ এবং জাতিসংঘ পুলিশের অনেকগুলো ক্ষেত্র রয়েছে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই পক্ষগুলো টেকসই নিরাপত্তা এবং শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করবে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এই নীতির সূচনা করার জন্য যথার্থ যোগ্য ও সঠিক ব্যক্তি।
নিঃসন্দেহে, ড. আহমেদ তাঁর কাজের পদ্ধতি, সৃজনশীল চিন্তা, দার্শনিক চিন্তা, পেশাদারি এবং দেশপ্রেমে অনন্য এবং অতুলনীয়। এটা প্রমাণিত যে তিনি সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ী। তিনি দেশের নাগরিকদের মন জয় করেছেন, প্রবাসী সম্প্রদায়ের হৃদয় জয় করেছেন এবং অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রেট সিল’খ্যাত জাতীয় মনোগ্রামে একটি ল্যাটিন শব্দবন্ধ আছে: ‘ই প্লুরিবাস’। ইংরেজিতে তার অর্থ হলো, ‘আউট অব মেনি, ওয়ান’ আর বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘অনেকের মধ্যে এক’। ড. বেনজীর আহমেদ সেই ‘অনেকের মধ্যে এক’; এক উজ্জ্বল অনন্য ব্যক্তিত্ব।
লেখক: বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন প্র্যাকটিসিং আইনজীবী।