ঈদুল আজহা শুধু আনন্দের নয়, এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক মহা উপলক্ষ্য। প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
যারা ১০ জিলহজের ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মালিক থাকবেন তাদের অবশ্যই কোরবানি করতে হবে। এই ইবাদতে রয়েছে রয়েছে গরিব-দুস্থ মানুষের অধিকার; তাদের জন্য বরাদ্দ কোরবানির গোশত এবং অবহেলিত একটি অংশ: পশুর চামড়া।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা ভাগে যারা কোরবানি দেন, তারা কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কি করবেন এ নিয়ে চিন্তায় থাকেন। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, এ চামড়া কেবল সদকা হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, এতে ব্যক্তিগত লাভ গ্রহণ করা জায়েজ নয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)
হাদিসে এসেছে, ‘যে কোরবানি করবে, সে যেন তার পশুর চামড়ার বিনিময়ে কিছু না নেয় এবং কসাইকে চামড়া দিয়ে পারিশ্রমিক না দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৭১৭)
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে ইসলামি বিধান অত্যন্ত স্পষ্ট। কোরবানিদাতা চাইলে এই চামড়া নিজেই ব্যবহার করতে পারবেন। এটি দিয়ে জায়নামাজ, পানির মশক, জুতা কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ জায়েজ। অর্থাৎ, চামড়া যদি ব্যক্তিগত উপকারে আসে, তবে তা নিজের কাছে রাখায় কোনো বাধা নেই।
তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোরবানিদাতারা চামড়া নিজেরা ব্যবহার করেন না, বরং তা বিক্রি করে দেন। এক্ষেত্রে শরিয়তের নির্দেশ হলো, বিক্রিলব্ধ সম্পূর্ণ অর্থ সাদকা করে দেওয়া জরুরি। এই অর্থ কোনো অবস্থাতেই কোরবানিদাতা নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করতে পারবেন না।
ইসলামি ফিকহের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ আদ্দুররুল মুখতার (৬/৩২৮) এবং ফাতাওয়া হিন্দিয়া (৫/৩০১) সহ অন্যান্য কিতাবেও এই মাসয়ালা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিধানের সারমর্ম হলো, কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, তেমনি এর চামড়া বিক্রির অর্থ গরিবদের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়।