আজান-ইকামতের সময় তর্জনীতে চুমু খাওয়ার বিধান

ধর্ম ডেস্ক
  ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:১১

নবিজি (সা.) বেলালকে (রা.) আজানের সময় দুই কানে আঙুল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ,আমাদের দেশে অনেক এলাকায় আজান ও ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময় তর্জনীতে চুমু খেয়ে চোখে বুলিয়ে দেওয়ার প্রচলত আছে। এই আমলের পক্ষে দলিল হিসেবে উল্লেখ করা হয়, হজরত আবু বকর (রা.) নাকি এই আমল করতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, যে ব্যক্তি এই আমল করবে তার জন্য আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।
মূলত এটি একটি বানোয়াট আমল ও বিদআত। নবিজি (সা.) বা তার কোনো সাহাবি এ রকম আমল করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য বা গ্রহণ করার মতো দুর্বল সূত্রেও কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
হজরত আবু বকরের (রা.) আমল ও ফজিলত সম্বলিত যে রেওয়ায়াতটি উল্লেখ করা হয়, প্রখ্যাত হাদিস-বিশারদগণ এটিকে ভিত্তিহীন ও জাল বর্ণনা বলেছেন। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ). বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যতোগুলো রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই বানোয়াট। (তাইসিরুল মাকাল: ১২৩)
আব্দুল হাই লখনভি (রহ.) বলেন, ইকামত বা অন্য কোথাও আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাম শোনা মাত্রই নখে চুমু খাওয়া সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিস বা সাহাবির আমল বর্ণিত হয়নি। যে এ রকম দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী। আর এটি একটি নিকৃষ্টতম বিদআত। (আস-সিয়ায়াহ: ২/৪৬)
ইসলামের সব বিধিবিধান ও আমলের উৎস হলো কোরআন ও রাসুলের সুন্নত অর্থাৎ তার কথা, কাজ ও সমর্থন। কোরআন ও রাসুলের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো সূত্রে আমলের নতুন কোনো ধরন উদ্ভাবন করে তাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করলে তা হয় দীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন বা বিদআত। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ

নিশ্চয় সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (সুনানে নাসাঈ: ১৫৬০)