মানুষের জীবনে যেমন ভালো সময় আসে, অনেক খারাপ সময়ও আসে। অনেক আশাভঙ্গ ও অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন এগিয়ে যায়। অনেক সময় কঠিন বিপদ মসিবতের মুখোমুখিও হতে হয়। ইসলামের শিক্ষা হলো, ভালো ও খারাপ সব অবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও আশা হারানো যাবে না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহর রহমত থেকে শুধু কাফের বা অবিশ্বাসীরাই নিরাশ হয়। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহর রহমত থেকে শুধু কাফেররাই নিরাশ হয়। (সুরা ইউসুফ: ৮৭)
মুমিনের আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো কঠিন বিপদের সময়ও আল্লাহর ওপর ভরসা করা। সব বিপদের মোকাবেলায় এক আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। মুমিন আল্লাহর ওপর ভরসা করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দুনিয়াতে বা আখেরাতে তার ভরসার পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও ঈমান প্রকাশ পায় এমন একটি দোয়া হলো,
حَسۡبُنَا اللّٰهُ وَ نِعۡمَ الۡوَكِیۡلُ
উচ্চারণ: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল
অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক!
কঠিন বিপদমুহূর্তে এ দোয়াটি পাঠ করেছিলেন আল্লাহর দুজন নবি; হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং আমাদের নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। আল্লাহর নবি হজরত ইবরাহিমকে (আ.) তার সম্প্রদায় যখন আগুনে নিক্ষেপ করে, তখন তিনি এ দোয়াটি পড়েছিলেন। আমাদের নবি হজরত মুহাম্মাদও (সা.) এ দোয়াটি পড়েছিলেন, যখন মুসলমানরা ওহুদে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, অনেকে শহিদ হন, এরপর খবর আসে কাফেররা মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। (সহিহ বুখারি: ৪৫৬৩)
ওহুদের বিপর্যয়ের পর কাফেরদের মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতির খবর শুনে নবিজি (সা.) ও মুসলমানরা আল্লাহর ওপর যে দৃঢ় ভরসার কথা প্রকাশ করেছিলেন তার প্রশংসা করে কোরআনে আল্লাহ তআলা বলেন, যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে যখমপ্রাপ্ত হওয়ার পরও, তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! (সুরা বাকারা: ১৭২, ১৭৩)
এই দুটি ঘটনায়ই আল্লাহ তাআলা তার ওপর ভরসাকারী বান্দাদের ওপর রহম করেছিলেন। তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। হজরত ইবরাহিমকে (আ.) তার সম্প্রদায় আগুনে নিক্ষেপ করতে পেরেছিল ঠিকই, কিন্তু আগুন তার কোনো ক্ষতি করেনি। আগুন তার জন্য শীতল ও আরামদায়ক হয়ে গিয়েছিল। কোরআনে ওই ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনি (ইবরাহিম) বললেন, তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ? ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরই ইবাদত কর, ওদের জন্যে। তোমরা কি বোঝ না? তারা বলল, একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে অগুন, তুমি ইবরাহিমের ওপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইবরাহিমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, আমি তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম। আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি। (সুরা আম্বিয়া: ৬৬-৭১)
দ্বিতীয় ঘটনায়ও নবিজি (সা.) ও তার সাহাবিরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করেছেন। কাফেররা মদিনায় আক্রমণের পরিকল্পনা করলেও পরে আর মদিনায় আক্রমণ চালানোর সাহস পায়নি। আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছেন। ওই ঘটনায় নবিজি (সা.) ও সাহাবিরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার পর তারা কীভাবে ভরসার প্রতিদান পেয়েছিলেন তা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহসহ। কোন মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সুরা আলে ইমরান: ১৭৪)
আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় দুই বান্দা ও নবির অনুসরণ করে আমরাও যে কোনো বিপদ-মসিবতে দোয়াটি পড়তে পারি। হতে পারে আল্লাহ তার অপার রহম ও করমে আমাদের সহায় হবেন।