অন্যের পাপ গোপন করার পুরস্কার

ধর্ম ডেস্ক
  ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩২

মানুষের দোষ যে গোপন করে, আল্লাহ তার দোষ গোপন করেন ।মানুষমাত্রই মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলে। গুনাহে জড়িয়ে যায়। জীবনে পুরোপুরি ভুল ও গুনাহমুক্ত থাকা খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়। বেশিরভাগ মানুষেরই এমন অনেক ভুলত্রুটি আছে যেগুলো সে গোপন রাখতে চায়। আল্লাহও চান বান্দার ত্রুটি গোপন থাকুক। বান্দা তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার সুযোগ পাক।

ইসলামে অন্যের ব্যক্তিগত ভুল-ত্রুটি, গুনাহ গোপন রাখা সওয়াবের কাজ, প্রকাশ করে দেওয়া গুনাহের কাজ, যদি ওই পাপ জুলুম বা অন্যের হকের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় এবং তা গোপন রাখার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا یُحِبُّ اللّٰهُ الۡجَهۡرَ بِالسُّوۡٓءِ مِنَ الۡقَوۡلِ اِلَّا مَنۡ ظُلِمَ وَ كَانَ اللّٰهُ سَمِیۡعًا عَلِیۡمًا
মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সুরা নিসা: ১৪৮)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
কোন বান্দা যদি অপর কোন লোকের ক্রটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে আল্লাহ তাআলা তার ক্রটি-বিচ্যুতি কিয়ামত দিবসে আড়াল করে রাখবেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৮৯)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ
যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)
যে ব্যক্তি অন্যের ভুলত্রুটি প্রকাশ করে দেয়, অন্যকে অপদস্ত করার চেষ্টা করে, আল্লাহও তার ত্রুটি প্রকাশ করে দেন, তাকে অপদস্ত করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেন,

مَنْ سَتَرَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ سَتَرَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَشَفَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ كَشَفَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ حَتَّى يَفْضَحَهُ بِهَا فِي بَيْتِهِ
যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন পাপের বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গোপন পাপ গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দেবেন, এমন কি এ কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৫৪৬)
কাউকে অপদস্ত করার জন্য তার পেছনে লেগে থাকা, দোষ খোঁজা ইসলামে একটি বড় গুনাহ। এই গুনাহের শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হবে, আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অহেতুক কুধারণা, অন্যের দোষ অনুসন্ধান ও গিবত করতে নিষেধ করে বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا كَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُكُمۡ بَعۡضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمۡ اَنۡ یَّاۡكُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَكَرِهۡتُمُوۡهُ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ। আর তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত: ১২)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ রকম স্বভাবের মানুষদের অত্যন্ত অপছন্দ করেছেন এবং তাদের ব্যাপারে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে উচ্চৈস্বরে বললেন,

يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِه
যারা মুখে মুসলমান হয়েছেন এবং অন্তরে এখনও ঈমান প্রবেশ করেনি তারা শুনুন, মুসলমানদের কষ্ট দেবেন না। মুসলমানদের অপদস্ত করার চেষ্টা ও দোষ খোঁজা থেকে বিরত থাকুন! যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দোষ খোঁজে, আল্লাহ তার দোষ খোঁজেন আর আল্লাহ যার দোষ খোঁজেন (অর্থাৎ গোপন না করেন) সে নিজের ঘরের ভেতরে থাকলেও তিনি তাকে অপদস্থ করে ছাড়েন। (সুনানে তিরমিজি: ২০৩২)
অন্যের ব্যাপারে খারাপ অনুমান করে তা চর্চা করা, দোষ খোঁজা, গিবত করা ইত্যাদি জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। এ রকম গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি যাকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে, তার কাছেও ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য, তার কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা কর্তব্য। তা না হলে আখেরাতে নিজের সওয়াব দিয়ে এবং অন্যের গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়ে এ রকম গুনাহ থেকে মুক্ত হতে হবে।