দুনিয়ার জীবনে সব সময় সুসময় থাকে না। শান্তিতে, নিশ্চিন্তায় কাটে না। বরং মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে, বিপদ-আপদ আসে। বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, আশংকা আমাদের অন্তরকে অস্থির করে তোলে। এ রকম অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর ফয়সালা ও তাকদিরে বিশ্বাস আমাদের অস্থিরতা ও হতাশা কাটাতে, শান্ত ও স্থির হতে সাহায্য করে।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যারা তাঁর অভিমুখী হয়, তাদের তিনি তাঁর দিকে পথ দেখান। যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়। (সুরা রা’দ: ২৭, ২৭)
এ আয়াতে আল্লাহর জিকর বা স্মরণ অর্থ তার প্রতি ইমান অথবা তার যে কোনো ইবাদত, জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ বা দোয়া। এগুলো মানুষের অন্তর প্রশান্ত করে।
দুনিয়ায় মানুষের জীবন নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত, ক্ষণস্থায়ী ও দুর্বল। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস মানুষকে শক্তি ও প্রশান্তি দেয়। এ কারনেই ইমানদাররা বিপদে ভেঙে পড়ে না, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিতে কম আক্রান্ত হয়।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাকে স্মরণ করতে, তার কাছে দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন বান্দা তাকে স্মরণ করলে তিনিও বান্দাকে স্মরণ করেন। তিনি বান্দার কাছেই অবস্থান করেন। বান্দা যখন তাকে ডাকে, তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ বলেন, অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরি করো না। (সুরা বাকারা: ১৫২)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সুরা আরাফ: ২০৫)
বান্দা ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তো তাদের নিকটেই, কেউ আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দেই; তাই তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়। (সুরা বাকারা: ১৮৬)
দুনিয়ার মোহে পড়ে মানুষ অনেক সময় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যায়। দুনিয়ার ব্যস্ততা, ভোগ-বিলাস, সম্পদ, পরিবার, সন্তান-সন্ততি যেন আমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে দেয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিবার পরিজনের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেটাও আল্লাহর নির্দেশ ও ইবাদতের অংশ। এর পাশাপাশি আল্লাহর রাস্তায় ব্যায় করতে হবে, দরিদ্র আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ-খবর নিতে হবে, দরিদ্রদের দান করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে; যারা এ রকম উদাসীন হবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু কাল পর্যন্ত সুযোগ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোন প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। (সুরা মুনাফিকুন: ৯-১১)
সুরা মুনাফেকুনের শুরুতে মুনাফিকদের মিথ্যা কসম ও ষড়যন্ত্রের কথা আলোচনা করা হয়েছে। এ সব কিছুর মূল কারণ ছিল দুনিয়ার প্রতি তাদের মোহ বা ভালোবাসা। তাই এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশনা দিচ্ছেন মুনাফিকদের মতো সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিসহ দুনিয়ার ভালোবাসায় ডুবে না যেতে। সম্পদ-সন্তানদের নিরাপত্তা ও দুনিয়াবি সুখের মোহে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে না যেতে।
এখানে দুনিয়ার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পুরোপুরি ত্যাগ করতে বলা হয়নি। দুনিয়াবি সম্পদ উপার্জন করতে নিষেধও করা হয়নি। সম্পদ ও সন্তানদের মোহে আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদত থেকে গাফেল হতে নিষেধ করা হয়েছে।