গুণেগুণে ৩৭। কিন্তু লিওনেল মেসির খেলা দেখলে মনে হবে না এই বয়সের সংখ্যাটা তারই। এখনো টগবগে তরুণের মতোই খেলে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। টগবগে তরুণরাও হয়তো মেসির সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি এখনো। বার্সেলোনা, পিএসজির জার্সিতে মাঠ কাঁপানোর পর এখন ইন্টার মিয়ামির দর্শকদের উজ্জীবিত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন মেসি।
শুধু নিজের দলীয় সমর্থকদের বললে ভুল হবে। মেসি তো উজ্জীবিত করে রাখেন প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদেরও। জাদুকরের মতোই নিন্দুককেও খেলা দেখিয়ে বশে আনতে পারেন মেসি।
কিন্তু কথা হলো, বয়স এত বেশি হওয়ার পরও কীভাবে মাঠের খেলায় দর্শকদের ঘোরে নিয়ে যান মেসি? আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের পায়ের জাদুতে গ্যালারিতে বসা জলজ্যান্ত মানুষ আরও কতদিন ঘোরে থাকবে? বয়স কি মেসিকে নইয়ে ফেলতে পারবে না? নাকি বয়সের ছাপ মেসির ত্বক এখনো অনুভব করতে পারেনি?
সত্যি কথা হলো, বয়সের কাজ বয়স করছে। আর মেসি করছেন নিজের আসল কাজটাই। মেসির প্রিয় খেলা আর দর্শকদের বিনোদিত করার যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটিই হয়তো তাকে বুদ্ধি ও শক্তি দান আর কৌশল বাতলে দিয়ে সহায়তা করেছে।
হাজার হাজার সমর্থক যখন মেসির বয়স নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন তিনিও এই চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন, তা হতে পারে না। বয়স ঢেকে রেখে কীভাবে পারফর্ম করতে হবে, সেটাই মেসি ভাবছেন সার্বক্ষণিক।
সম্প্রতি ক্রীড়া বিষয়ক জনপ্রিয় ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানোকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেসি। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, বয়স ঢাকতে নিজের খেলার ধরণ বদলে ফেলেছেন তিনি।
মেসি বলেন, ‘মুহূর্ত, পরিস্থিতি এবং আমার বয়সের কারণে আমি আমার খেলার ধরন পরিবর্তন করেছি। আমি সবকিছুর সঙ্গে কিছুটা খাপ খাইয়ে নিচ্ছি। নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে শুরু করেছি এবং লিগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছি। যা আমার জন্য নতুন ছিল। আমি শুরু থেকেই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম।’
২০২৪ মৌসুমে ইন্টার মিয়ামিতে ইনজুরির কারণে ৩৪ ম্যাচের মাত্র ১৯টি খেলেছেন মেসি। গোল করেছেন ২০টি, অ্যাসিস্ট ১৬। তার দুর্দান্ত যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের (এমএলএস) ইতিহাসে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করেছে মিয়ামি। এছাড়া ২০২৩ সালে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরই মিয়ামিকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন মেসি। যদিও মৌসুমটি সবমিলিয়ে ভালো যায়নি।
মিয়ামি সম্পর্কে মেসি বলেন, ‘একটি ক্লাব তৈরি করার জন্য আপনাকে শিরোপা জিততে হবে। ক্লাবটি (এমএলএস ২০২৩ সালে) একটি খারাপ বছর পার করছিল এবং আমার আসার একটু পরেই আমরা লিগ কাপ জিতেছিলাম, ক্লাবের জন্য প্রথম ট্রফি। এটি আমাদের জন্য অসাধারণ ছিল, এবং এখন আমরা এই প্লেঅফ খেলতে আগ্রহী এবং আশা করছি এমএলএস কাপ জিততে সক্ষম হবো।’
মেসি এখন সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের মুখোমুখি হন, সেটি হলো ২০২৬ বিশ্বকাপ। মেসির খেলা নিয়ে প্রশ্ন। তিনি থাকবেন কিনা।
জবাবে মেসি জানান, অবসর নয়, ২০২৬ বিশ্বকাপে তার খেলা না–খেলা নিয়েই বেশি প্রশ্ন করা হয়।
মেসি বলেন, ‘আমি জানি না (২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবো কি না)। অনেক প্রশ্ন হয় এ নিয়ে, বিশেষ করে আর্জেন্টিনায়। আমি এ বছর ভালোভাবে শেষ করতে চাই, এরপর পরের বছরের প্রাক্–মৌসুম ভালোভাবে শুরু করতে চাই, প্রচুর ভ্রমণের জন্য যেটা গত বছর পারিনি।’
মেসি আরও বলেন, ‘(প্রাক্-মৌসুম ভালোভাবে শুরুর পর) আমি কেমন করছি, কেমন অনুভব করছি, সেটা বোঝার চেষ্টা করবো। (২০২৬ বিশ্বকাপের) আমরা যেমন কাছাকাছি রয়েছি, তেমনি সময়ও হাতে আছে অনেক এবং ফুটবলে যেকোনো কিছুই হতে পারে। প্রতিটি দিন ধরে ধরে এগোচ্ছি, এর বাইরে ভাবছি না।’