অবসর নিতে চান- এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন বোর্ডকে। বোর্ড কর্মকর্তারা অনুরোধ জানিয়েছিলেন, অন্তত আগামী জুনে ইংল্যান্ড সফরে যেন দলে থাকেন তিনি। কিন্তু বিরাট কোহলি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। নিজের অবস্থানের কথা বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে, টেস্ট থেকে অবসর নেয়া হয়ে গেলো বর্তমান সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটারের।
১৪ বছর ভারতের হয়ে সাদা জার্সিতে খেলে থামার নিলেন কোহলি। খেলোয়াড় জীবনে বারবার স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে নিজের সেরা সমর্থক বলে এসেছিলেন কোহলি। এও জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে কিভাবে আনুষ্কা শর্মা তার পাশে ছিলেন। স্বামী বিরাট কোহলির অবসর ঘোষণার পর মুখ খুলেছেন আনুষ্কাও। দিয়েছেন আবেগঘণ বার্তা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেন বলিউড অভিনেত্রী। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট মাঠে হাসিমুখে তারা দু’জন। কোহলি টেস্ট জার্সি পরে রয়েছেন। আনুষ্কা লেখেন, ‘ওরা রেকর্ড ও মাইলফলক নিয়ে কথা বলবে; কিন্তু আমি মনে রাখব সেই চোখের জল, যা তুমি কারও সামনে ফেলোনি। সেই সব লড়াই, যা কেউ দেখেনি। মনে রাখব, এই ফরম্যাটকে কতটা ভালবাসা তুমি দিয়েছ। আমি জানি তার জন্য তোমাকে কতটা ত্যাগ করতে হয়েছে। প্রতিটা টেস্ট সিরিজের পর তুমি ফিরে এসেছ আরও পরিণত, আরও নম্র হয়ে। এ সময়ে তোমার পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছি আমি।’
আনুষ্কা ভেবেছিলেন, তিন ফরম্যাটের মধ্যে সবার শেষে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন বিরাট কোহলি। কিন্তু আগেই টেস্টকে বিদায় বলে দিলেন। এখন ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবেন শুধু। আনুষ্কা লেখেন, ‘কেন জানি না, আমার মনে হত, টেস্ট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবে তুমি; কিন্তু তুমি সবসময় নিজের মনের কথা শুনেছ। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, এই বিদায়ের প্রতিটা মুহূর্ত তুমি অর্জন করেছ।’
কোহলির সঙ্গে বিয়ের পর মাঝেমাঝেই মাঠে দেখা যেত আনুষ্কাকে। ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গের পর সবার আগে আনুষ্কাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন কোহলি। আবার কোহলির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। জীবনের প্রতি পদে একে অপরের সঙ্গে হেঁটেছেন তারা। টেস্ট কেরিয়ারের শেষ মুহূর্তেও কোহলির পাশেই থাকলেন আনুষ্কা।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন কোহলি। তিনি লেখেন, ‘১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নিল ব্যাগি টুপি পরেছিলাম। সত্যি বলতে তখন জানতাম না, ক্রিকেটের এই ফরম্যাট আমাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পনাও করিনি। এই ফরম্যাট আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। সারাজীবন এই শিক্ষা বহন করব।’
কোহলি আরও লিখেন, ‘সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত গভীর বিষয় থাকে। শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময় খেলা, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেউ দেখতে পায় না। তবে এগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।’
কোহলি জানান, অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না। তিনি লিখেন, ‘ক্রিকেটের এই ফরম্যাট থেকে সরে যাওয়া সহজ নয়। তবু সিদ্ধান্তটা ঠিক মনে হচ্ছে। আমার সব কিছু এই ফরম্যাটের জন্য দিয়েছি। যা আশা করেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি ফিরে পেয়েছি।’
শেষে লিখেছেন, ‘কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। যাদের সঙ্গে মাঠ ভাগ করে নিয়েছি এবং এ যাত্রাপথে যাদের সাহায্য পেয়েছি, সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সবসময় হাসিমুখে নিজের টেস্টজীবনের দিকে ফিরে দেখব। ২৬৯ নম্বর টুপির যাত্রা শেষ হল।’
লেখার শেষে কোহলি দিয়েছেন ভালবাসার ইমোজি। অবসরের দিনই স্ত্রী আনুষ্কার সঙ্গে মুম্বাই ছাড়েন কোহলি। পরের গন্তব্য তাদের দিল্লি।