আগামী ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের একটা সিদ্ধান্ত। ভারতকে ঠেকাতে বাংলাদেশের পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করতে যাচ্ছিল তখনই ভারতীয় ফুটবল বোমা ফাটালো। জাতীয় দল থেকে অবসরে থাকা ফুটবলার ৪০ বছর বয়সী সুনীল ছেত্রীকে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সুনীল ছেত্রী।
বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ফুল ফুটতে যাচ্ছিল। ইংলিশ লিগের ফুটবলার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা চৌধুরী ভারতের বিপক্ষে খেলবেন সেটি সময়ের অপেক্ষা। ভারত ধরে নিয়েছিল হামজা মানেই একজন অভিজ্ঞ ফুটবলারের আগমন, বাংলাদেশের জন্য শক্তি অনেকগুণ বেড়ে যাওয়া। হামজা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হলেও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে হামজা আক্রমণে যাবেন সেটা নিশ্চিত। তিনি জীবন বাজি রেখেই খেলবেন সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এমন একজন অভিজ্ঞ ফুটবলার মাঠে থাকলে সেটা প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক। সব দেখে শুনে চোখ-কান বন্ধ রাখেনি ভারত। তারাও বুঝে শুনে দেখেছে হামজাকে রক্ষণ ভাগে বোতল বন্দি করতে পারেন এমন একজনকেই দরকার।
ভারতীয় ফুটবলে গুঞ্জন ছিল সুনীল ছেত্রী থাকলে চিন্তাই থাকত না। কিন্তু সুনীল গত বছর ৬ জুন কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে জাতীয় দলের জার্সি খুলেছেন, এ মৌসুমে ব্যাঙ্গালুরু এফসিতে খেলছেন সুনীল, ১২টি গোল করেছেন তিনি। সুনীলের অবসরের পর ভারতীয় ফুটবল আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেনি। কোচ মানালো মার্কুয়েজ দেখলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সুনীলের পারফরম্যান্সের আমলনামা চমৎকার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত যত ম্যাচ জিতেছে, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব সুনীলের।
এমনকি ভারতের বিপক্ষে যত ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল সেই ম্যাচ থামিয়ে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন সুনীল। শেষ মুহূর্তে গোল করে সুনীল ভারতকে বাঁচিয়েছেন। তার সাফল্য ভারতীয় ফুটবল আকাশে জ্বলজ্বল করে। ভারতের বিপক্ষে আক্রমণভাগের শক্তি বাড়াতে সুনীলের বন্ধু সুব্রত পাল সুনীলকে ডেকে এনেছেন। সুব্রত পাল এএফসি কাপে সুনীলের সঙ্গে খেলেছেন। দুই জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ গভীর সম্পর্ক এখন ভারতীয় ফুটবল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন সুব্রত পাল। বন্ধুর ডাক আর দেশের জন্য লড়াই করতে ১ মিনিট চিন্তা করেননি সুনীল। দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে সুনীল প্রস্তুত।
সুনীল শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষেই ম্যাচ খেলবেন না, তার আগে ১৯ মার্চ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মালদ্বীপের বিপক্ষে সুনীল স্ট্রাইকার পজিশনের ফুটবলার, আক্রমণভাগের অসাধারণ ফুটবলার। আর হামজা চৌধুরী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। হামজার সঙ্গে সুনীলের দেখা হবেই। হামজা নিজের পজিশনে খেলবেন। সুযোগ বুঝে ভারতের উঠানে যাবেন, দুয়ারে আক্রমণ করবেন, গোল করানোর চেষ্টা করবেন। এটাই স্বাভাবিক।
সুনীল নামলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সুনীলের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে হামজাকে। তাতে সুনীলের পেছনে পুরো দলের ওপর চাপ কমতে পারে। সুনীল চাইবেন হামজাকে তার পজিশনে ব্যস্ত রাখতে। হামজাও চাইবেন সুনীলকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে আক্রমণে বলের যোগান দিতে। হামজা এবং সুনীল, দুই জনের উপস্থিতি মাঠের লড়াইয়ে যুদ্ধ হবে সেটি নিশ্চিত। কে কাকে দমিয়ে রাখতে পারবেন সেটি এখন দেখার বিষয়। সুনীলকে নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় ফুটবল সংস্থা। সুনীলের ফেরায় ভারতীয় ফুটবলে আনন্দ উল্লাস, স্বস্তি বইছে। আর শেফিল্ডের খেলা শেষে হামজা যখন বাংলাদেশের জার্সিটা গায়ে জড়াবেন, তখন বাংলাদেশের অন্য ফুটবলারদেরও স্পিরিট বেড়ে যাবে।