ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরির পরও সংগ্রহটা খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। তা পাড়ি দিতে গিয়ে অবশ্য কিছুটা ঘাম ছুটে যায় ভারতের।
কিন্তু বিরাট কোহলি ছিলেন বলেই তেমন চিন্তার ছাপ দেখা যায়নি স্বাগতিক ড্রেসিং রুমে। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা কোহলি আজও রান তাড়ায় নেমে খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। দলকে ভাসিয়েছেন টানা পঞ্চম জয়ের আনন্দে।
অপরাজিত থাকার তকমা ধরে রাখার লক্ষ্যেই ধর্মশালা স্টেডিয়ামে আজ মুখোমুখি হয়েছিল দল। নিউজিল্যান্ডকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে সেই ধারাটা আরো এক ধাপ টেনে নিল ভারত। ১২ বল হাতে রেখে কিউইদের বিপক্ষে ৪ উইকেটের দারুণ জয় পায় স্বাগতিকরা। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম ভারতের কাছে আইসিসি টুর্নামেন্টে হারলো নিউজিল্যান্ড।
২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন। তাদের ওপেনিং জুটিতেই আসে ৭১ রান। দ্বাদশ ওভারে লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে রোহিত বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা ভারতীয় অধিনায়ক আজ ৪০ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৪৬ রান করেছেন।
রোহিতের বিদায়ের পর গিলও পারেননি টিকে থাকতে। ফার্গুসনের পরের বলেই দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন এই ডানহারি ওপেনার। তবে এর আগে আমলার একটি রেকর্ড ভাঙেন গিল। ২৬ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে দ্রুততম ২০০০ রানের মালিক বনে যান এই ভারতীয় ওপেনার। ৪০ ইনিংসে ব্যাট করে এই রেকর্ড গড়েছিলেন আমলা। ২ ইনিংস কম খেলে তাকে ছাড়িয়ে গেলেন গিল।
দুই ওপেনার বিদায় নেওয়ার পর হাল ধরেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। অবশ্য ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বল পরেই মাঠ ঢেকে যায় কুয়াশায়। পরের ওভারের শেষদিকে খেলাই বন্ধ হয়ে যায় ঘন কুয়াশার কারণে। মিনিট দশেক পর কুয়াশা কেটে গেলে ফের শুরু হয় খেলা। এরপর ইনিংস মেরামতে মনোযোগ দেন কোহলি ও আইয়ার। দুজনে যোগ করেন ৫২ রান। ২২তম ওভারে কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট আঘাত হানলে বিদায় নেন দারুণ খেলতে থাকা আইয়ার (৩৩)।
৩ উইকেট হারালেও বড় বিপদে পড়তে হয়নি ভারতকে। কারণ ফের হাল ধরেন কোহলি। ৫০-এর বেশি রান যোগ করার পর এই জুটি ভাঙে রাহুলের বিদায়ে। ৩৫ বলে ২৭ রান করে কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন তিনি। তবে কোহলি হার মানেননি। ৬০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬৯তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি।
এই ফিফটির মাধ্যমে বিশ্বকাপে ৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডে সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলেছেন কোহলি। দুজনেই বিশ্বকাপে ১২টি করে ৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন। একই কীর্তি আছে লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার। তারা তিনজনেই যৌথভাবে আছেন তালিকার দুইয়ে। ২১ বার ৫০ বা তার বেশি রান করে শীর্ষে আছেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার।
কোহলি ফিফটির দেখা পাওয়ার পরের ওভারেই রানআউট হয়ে ফেরেন সূর্যকুমার যাদব (২)। কোহলির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ৭৮ রানের জুটি গড়েন কোহলি। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ১০৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯৫ রানে আউট হন তিনি। সেঞ্চুরির জন্য ম্যাট হেনরিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন অপরাজিত থাকতে হয় তাকে। দারুণ সঙ্গ দেওয়া জাদেজা জয় নিশ্চিত করে অপরাজিত থাকেন ৪৪ বলে ৩৯ রান করে।
এর আগে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে গুটিয়ে যায় ২৭৩ রানে। শুরুতেই ধাক্কা খায় তারা। দুই ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি ও মোহাম্মদ সিরাজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াং। এর মধ্যে ৯ বল খেলে সিরাজের বলে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফেরেন কনওয়ে। এরপর দলীয় ১৯ রানে ইয়াং (১৭) এর উইকেট হারায় কিউইরা। তাকে সরাসরি বোল্ড করে ফেরান শামি।
চাপের মুখে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের হাল ধরেন রাচিন রবীন্দ্র ও মিচেল। দুজনের জুটিতে আসে ১৫৯ রান। এর মধ্যে ৮৭ বলে ৭৫ রান করে শামির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন রবীন্দ্র। মাঝে কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম ফেরেন ব্যক্তিগত ৫ রানে। তবে মিচেল ঠিক ১০০ বলের মোকাবিলায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির দেখা পান।
অবশ্য ব্যক্তিগত ৭৩ রানে মিচেলের একটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জসপ্রীত বুমরাহ। এর আগে ব্যক্তিগত ৬০ রানেও উইকেটকিপার লোকেশ রাহুল ক্যাচ ফেলে দিলে বেঁচে যান মিচেল। দুইবার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। কিন্তু শেষ ছয় ওভারে রান তোলার গতি কমে যায় কিউইদের। সেই চাপে একের পর এক উইকেটও হারায় তারা।
শেষ ৬ ওভারে কিউইরা মাত্র ৩০ রান তুলতেই হারায় ৬ উইকেট। এর মধ্যে সেট ব্যাটার ড্যারিল মিচেলকে শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ফিরিয়ে নিজের পাঁচ উইকেট পূরণ করেন শামি। মিচেলের ব্যাট থেকে আসে ১২৭ বলে ১৩০ রান; হাঁকান ৯টি চার ও ৫টি ছক্কা। নিউজিল্যান্ডের শেষ পাঁচ ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
ভারতের কুলদিপ উইকেট পেয়েছেন ২টি এবং বুমরাহ ও সিরাজ পেয়েছেন ১টি করে উইকেট। পাঁচ উইকেট নেওয়া শামি দলে ফিরেই পেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।