ম্যাচের আগে পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়তে এসেছেন তারা। কিন্তু ঘটনা ঘটলো ঠিক উল্টো। পাকিস্তানকেই অনায়াসে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো আফগানিস্তান।
২০২৩ বিশ্বকাপের ২২তম ম্যাচে আজ চেন্নাইয়ে পাকিস্তান দলকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানরা। আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রানের সংগ্রহ গড়ে বাবর আজমের দল। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে এবং ৬ বলে হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানরা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এত রানের লক্ষ্য তাড়া করে এই প্রথম জয় পেল তারা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ডও গড়েছে আফগানিস্তান। এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ভারত।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে এর আগের দুই আসরে মাত্র এক ম্যাচ (২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে) জিতেছিল আফগানিস্তান। অথচ এবার এক আসরেই দুই জায়ান্টকে হারিয়ে দিল তারা। কিছুদিন আগে তারা হারিয়েছে গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। এবার হারাল পাকিস্তানকে। শুধু কি তাই, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ বারের দেখায় এই প্রথম জয়ের মুখ দেখলো আফগানিস্তান। ফলে জয়টি তাদের জন্য ঐতিহাসিক সন্দেহ নেই। অন্যদিকে পাকিস্তান টানা ৩ ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে উঠার লড়াই থেকে প্রায় ছিটকেই পড়লো।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটেই অনেকটা পথ এগিয়ে যায় আফগানিস্তান। দুজনেই পান ফিফটির দেখা। তাদের জুটিতে আসে ১৩০ রান। এর মধ্যে রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৫৩ বলে ৬৫ রান করে শাহিনের বলে আউট হলেও ইব্রাহীম জাদরান ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে তার সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ১১৩ বলের মোকাবিলায় ৮৭ রান করে হাসান আলির শিকারে পরিণত হন তিনি।
দুই ওপেনার বিদায় নিলেও ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি আফগানরা। বরং পরের দুইজন বাকি পথ অনায়াসেই পাড়ি দিয়েছেন। তিনে নামা রহমত শাহ ৮৪ বলে ৭৭ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন। বিশ্বকাপে এই প্রথম আফগানিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটার ফিফটির দেখা পেলেন। আর অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহীদি অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইমাম উল হক ও আবদুল্লাহ শফিকের পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে ভালো শুরু পায় পাকিস্তান। ইমামকে বিদায় করে ৫৮ রানের এই জুটি ভাঙেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এরপর শফিককে সঙ্গ দিয়ে দলের সংগ্রহ বাড়াতে থাকে বাবর। দুইজনে গড়েন ৫৪ রানের জুটি। ৬০ বলে ফিফটির দেখা পান শফিক। আর ৮ রান যোগ করতেই তিনি বিদায় নেন এলবিডব্লিউ হয়ে।
চারে নামা রিজওয়ান ৮ রান করে হারান উইকেট। একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট চালাতে থাকেন বাবর। তিনি ফিফটির দেখা পান ৬৯ বলে। সেঞ্চুরির দিকে এগোলেও সেটি আর করা হয়নি পাকিস্তানি অধিনায়কের। ৯২ বলে ৭৪ রান করে হারান উইকেট। মাঝে ২৫ রান সংগ্রহ করে বিদায় নেন সাউদ শাকিল।
শেষদিকে এসে দারুণ জুটি গড়েন ইফতেখার ও শাদাব। ৪৫ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে তারা ভালো সংগ্রহ এনে দেয়। ২৭ বলে ৪০ রান করে ইফতেখার। ৩৮ বলে সমান রান করে শেষ বলে উইকেট হারান শাদাব খান।
আফগানিস্তানের পক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেন নুর আহমাদ। জোড়া উইকেট পান নাভিন উল হক। একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি ও ওমরজাই।