বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে ২ জুলাই, বুধবার থেকে। এদিন কলম্বোর আর প্রেমাদাস স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। খালি চোখে এটাও অন্য আট-দশটা ওডিআই সিরিজের মত একটি সিরিজ। কিন্তু আসলে তা নয়। এ সিরিজের বিশেষ তাৎপর্য্য আছে। আছে গুরুত্বও।
প্রথমতঃ এ সিরিজে বুধবার বাংলাদেশ মাঠে নামবে নতুন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে। আর এ সিরিজ দিয়েই শুরু হবে বাংলাদেশের ওয়ানডে র্যাংকিং উন্নত করার মিশন।
সবার জানা, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সবার নীচে, মানে ১০ নম্বরে। বাংলাদেশকে বাছাইপর্ব ছাড়া আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে হলে অন্তত র্যাংকিংয়ে প্রথম ৮ দলের মধ্যে জায়গা করে নিতে হবে। না হয় বাছাই খেলতে হবে।
তাই আর র্যাংকিংয়ে সেরা আটে থেকে বাছাই পর্ব না খেলে সরাসরি ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে হলে আগামী ওয়ানডে সিরিজগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কঠিন মিশন শুরুই হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে।
সেই সিরিজে বাংলাদেশ মাঠে নামবে নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে। নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে নিজেদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখার মিশনের শুরুটা কেমন হবে টাইগারদের- তা দেখতে মুখিয়ে ভক্তরা।
বাংলাদেশের সমর্থকদের বড় অংশ চিন্তিত। তাদের ধারনা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ সিরিজে ভাল করা খুব কঠিন হবে টাইগারদের পক্ষে। কারণ দুটি। প্রথমঃ শেষ টেস্টে খুব খারাপভাবে হারের ধাক্কা সামলে উঠে ভাল করা কঠিন। আর দ্বিতীয় হলো, মিরাজের ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সি পাওয়া নিয়ে দলের ভেতরে, ড্রেসিং রুমে, টিম হোটেল ও ড্রেসিং রুমে একটা গুমোট ভাব কাজ করছে। এতে করে দলের সম্প্রীতি, ঐক্য অটুট থাকা নিয়েও আছে সংশয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নাজমুল হোসেন শান্তর ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরিয়ে দেয়া আর তার জায়গায় মিরাজকে বসানোর প্রক্রিয়াটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও মসৃন ছিল না। পরিষ্কার বোঝা গেছে, শান্তকে কিছু না জানিয়ে মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করে তারপর কথা বলা হয়েছে।
এতে করে শান্তর মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ থেকেই শান্ত হঠাৎ টেস্ট ক্যাপ্টেন্সিও ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় শান্তও খুব খোশ মেজাজে ওয়ানডে সিরিজে নিজের সেরাটা দিবেন বা দিতে পারবেন তা ভাবাও হয়ত ঠিক হবে না।
শান্তকে কিছু না জানিয়ে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার একটা নেতিবাচক প্রভাব দলের ওপর পড়েছে। বাকি সদস্যদের মধ্যে যারা শান্তকে বেশি ভালবাসেন, তারা কেউই এটাকে ভালভাবে নেননি। খুব স্বাভাবিবকভাবেই একটা অদৃশ্য গ্রুপিং বা বিভাজন তৈরি হয়ে থাকবে।
সেটা দল হয়ে খেলার পথে হতে পারে বড় বাঁধা। সেই বাঁধা অতিক্রম করে ভাল খেলা সহজ কাজ হবে না। এখন নতুন অধিনায়ক মিরাজ যদি নিজের ক্যারিশমা দিয়ে সেই বাঁধা অতিক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, সেটা ভিন্ন কথা। অন্যথায় শ্রীলঙ্কার সাথে তিন ম্যাচে এ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ভাল করার সম্ভাবনা খুব কম।
এমনিতেও বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের দিনকালও তেমন ভাল যাচ্ছে না। এ বছর ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিউজিল্যান্ড (৫ উইকেটে) ও ভারতের বিপক্ষে (৬ উইকেট) ২টি ওয়ানডে খেলে দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।
তারও আগে ২০২৪ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ আর ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচসহ মোচ ৪ ম্যাচে জয়ের নাগাল পায়নি টাইগাররা। মানে শেষ ৬ ওয়ানডেতে পরাজয় সঙ্গী বাংলাদেশের।
টেস্ট সিরিজে হারের দগদগে ঘা এবং অধিনায়কত্ব ইস্যুতে দলের সম্প্রীতি ও ঐক্যে ফাটল ধরা অবস্থায় সেই হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আবার জয়ের পথ খুঁজে পাবে কি মিরাজের দল?