চার ওপেনারকে রেখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের মধ্যে দু’জন ওপেনিংয়ে খেলবেন। নিশ্চিতভাবেই একজন থাকবেন একাদশের বাইরে। বাকি একজন চার কিংবা পাঁচ নম্বরে খেলবেন। চার ওপেনারের মধ্যে আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলা সৌম্য সরকার ওপেনিংয়ে থাকাটাও নিশ্চিত। এখন শুধু লিটন-এনামুল-তামিমের মধ্যে একজন সৌম্যর সঙ্গী হবেন। লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় এই ওপেনিং পজিশন।
সর্বশেষ সিরিজে কিউইদের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করেছিলেন এনামুল হক বিজয় ও সৌম্য সরকার। এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সব ম্যাচেই ওপেনিংয়ে খেলেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ওপেনিংয়ে ব্যাট করলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ তিন ম্যাচে লিটনের ব্যাটিং পজিশন ছিল চার নম্বরে।
সৌম্য সরকার আবার ২০২১ সালের পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন। কিন্তু দুই ম্যাচের একটিতে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। তারপরও ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে সুযোগ পেয়ে যান। প্রথম ম্যাচে আউট হন কোনও রান না করেই। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে উপহার দেন ১৬৯ রানের অবিশ্বাস্য একটি ইনিংস।
কিউইদের বিপক্ষে সৌম্যর ওই ইনিংসই লঙ্কানদের বিপক্ষে তার ওপেনিংয়ে ব্যাট করার একমাত্র কারণ নয়। পরিসংখ্যানও তার পক্ষে। ওপেনিংয়ে নেমে ৩৬ ইনিংসে ৩৬.৮৯ গড়ে সৌম্যর রান সবচেয়ে বেশি; সংগ্রহ ১ হাজার ৩২৮। তিন নম্বর পজিশনে ১৬ ইনিংসে ৩৪.০৬ গড়ে সংগ্রহ ৫৪৫ রান। এর বাইরে আর কোন পজিশনেই সফল নন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এনামুল ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করেছিলেন। এবারও তার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সর্বশেষ খেলা তিন ম্যাচে কিছু রান করলেও ইনটেন্ট দেখাতে পারেননি। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৩, ২ ও ৩৭। শেষ সিরিজের ধারাবাহিকতা ও বিপিএলের পারফরম্যান্স এনামুলকে লঙ্কানদের বিপক্ষে হোম সিরিজে জায়গায় করে দিয়েছে। এনামুল অবশ্য ৪৫ ম্যাচের মধ্যে ৪২ ম্যাচই ওপেনিংয়ে খেলেছেন। বাকি তিন ম্যাচ খেলেছেন তিন নম্বরে।
যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের ব্যাটার তানজিদ তামিমের ব্যাপারটা আবার ব্যতিক্রম। এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যান তিনি। ক্যারিয়ারের ১৪ ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচেই কেবল তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছেন, বাকি ম্যাচগুলোতে খেলেছেন ওপেনিংয়ে। ওই ১৪ ম্যাচের মধ্যে একটি হাফ সেঞ্চুরি থাকলেও জুনিয়র তামিম এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্স দিয়েই তার ওয়ানডে দলে সুযোগ হয়েছে। ফলে শ্রীলঙ্কা সিরিজে সৌম্যর ওপেনিং সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে এনামুলের সঙ্গে আছেন জুনিয়র তামিম।
অথচ সৌম্যর মতো ওপেনিং পজিশনে সবচেয়ে সফল লিটন দাস। তার পরেও সর্বশেষ সিরিজে চার নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। ব্যর্থ হয়েছেন যদিও। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ৬৬ ইনিংসে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করে ৩৩.৪৫ গড়ে ২ হাজার ৭৪ রান করেছেন লিটন। ৫ সেঞ্চুরির সবগুলোই এসেছে ওপেনিংয়ে খেলে। অথচ তিন নম্বরে ১৩ ম্যাচ খেলে লিটনের রান মাত্র ২৪০। ৪ নম্বরে ৫ ম্যাচ খেলে তার সংগ্রহ আরও কম ৮১। তবে ৫ নম্বর পজিশনে ৪ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে সফল তিনি। ওই পজিশনে ১৬৮ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
পরিসংখ্যান বিবেচনায় সৌম্যর সঙ্গে ওপেনিংয়ে খেলার মতো সবচেয়ে ফিট লিটনই। দু’জনই স্ট্রোক খেলতে অভ্যস্ত। পাওয়ার প্লের প্রথম দশ ওভার ব্যবহার করা তাদের জন্য অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক সহজ। অন্তত পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। লঙ্কানদের বৈচিত্র্যময় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে লিটন-সৌম্যকে বিবেচনা করা হবে কিনা সেটি সময়েই বলে দেবে! তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় হাথুরুসিংহে ঘোষণা দিয়েছেন লিটন-সৌম্য জুটিই তার পছন্দ। বলেছিলেন, ‘ওপেনিং জুটি অতীতে ভালো করতে পারেনি। কাজ করলে এতবার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতো না। আগে যে ভুল করেছি, আমরা সেই ভুলগুলো শোধরাতে চাই। যদি তারা ভালো করে, আমরা খুব বেশি পরিবর্তন করতে চাই না।’
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। লিটনের ওপেনিংয়ে খেলা নিয়ে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘কালকে (বুধবার) যখন ব্যাটিংয়ে নামবে, তখন জানতে পারবেন। আসলে পুরোটাই দলের পরিকল্পান। দলের প্রয়োজনে যখন যার যেখানে ব্যাটিংয়ের দরকার হবে, তখন তাকে সেখানেই খেলতে হবে। এখন বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না।’
লিটনের পরিসংখ্যান নজরে আনতেই শান্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘লিটন আসতে পারে। অন্য কেউও আসতে পারে। ভাই একটু অপেক্ষা করেন না। কালকেই দেখবেন সব। দলের জন্য সেটা ভালো হবে সেই কম্বিনেশনই করা হবে।’
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ। তার আগে দুই ব্যাটারকে নিয়ে হাথুরুসিংহে বিশেষ ক্লাসই নিচ্ছেন। আজকের (মঙ্গলবার) অনুশীলনে পুরো দল মাঠে থাকলেও কেউই সিরিয়াস অনুশীলন করেননি। তবে আগের দিন সোমবার কঠোর অনুশীলন করেছেন ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে পাশাপাশি নেটে দুই ব্যাটার লিটন ও সৌম্যর ব্যাটিং পাখির চোখে পরখ করেছেন তিনি। শুধু প্রধান কোচই ছিলেন না, ব্যাটিং কোচ ডেভিড হ্যাম্পও সঙ্গে ছিলেন। লম্বা সময় ধরে চলেছে তাদের ব্যাটিং ক্লাস। হয়তো টি-টোয়েন্টির মতো লঙ্কানদের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও সৌম্য-লিটন জুটি দেখা যেতে পারে।
লম্বা সময় ধরেই বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি নিয়ে অস্বস্তি আছে। নতুন সিরিজ আসলে বদলে যায় ওপেনাররাও। এই যেমন ওয়ানডে বিশ্বকাপের ওপেনিং জুটিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ অ্যাওয়ে সিরিজে খেলানো হয়নি। লঙ্কানদের বিপক্ষে নতুন আরও একটি সিরিজ কাল থেকে শুরু হচ্ছে। তাহলে কি আবারও বদল আসবে ওপেনিংয়ে? তবে দলের ভালো ফলাফলের স্বার্থে ওপেনারদের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তার মতে লিটন-সৌম্য ভালো অপশন হতে পারে, তবে তাদের ধারাবাহিক হতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘একটা অপশন হতে পারে লিটন-সৌম্য। দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের ওপেনিংয়ে ভালো কোনও জুটি পাইনি। আমরা যেমন ফলাফল আশা করি, তাতে করে ওপেনারদের ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। কিন্তু দু’জনেরই ধারাবাহিকতার ভীষণ অভাব। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যেতে পারে। সেই পরীক্ষায় লিটন-সৌম্যকেও দেখা যেতে পারে। দলে আরও অপশন আছে, সেগুলোও দেখা যেতে পারে।’