পেনাল্টি মিসে করে কাঁদলেন রোনালদো

রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে কোয়ার্টারে পর্তুগাল

স্পোর্টস ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০২৪, ১৪:০৭

তাকে লৌহমানব বলেই জানে ফুটবলবিশ্ব। সেই রোনালদো কাঁদছেন। তবে তখনো ম্যাচ শেষ হয়নি। পেনাল্টি মিস করার যন্ত্রণা। গ্যালারিতে তার মায়ের চোখে পানি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য হাসি ফুটল। কোনো রকমে বিপদ এড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল। টাইব্রেকারে পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়েগো কোস্তা। সোমবার বিকেলের ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউট সেভের হ্যাটট্রিকে ম্যাচ জিতলেন রোনালদোরা।
গ্রুপ পর্বে রোলারকোস্টার রাইড ছিল পর্তুগালের জন্য। চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে জয়, আবার তুরস্কের সাথে অনবদ্য ফুটবল। কিন্তু শেষ ম্যাচে হারতে হয়েছিল দুর্বল জর্জিয়ার বিরুদ্ধে। রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা করলেও, রবার্তো মার্তিনেজের দলের ইউরো ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। যেভাবে কথা হচ্ছিল রোনালদোর ফর্ম নিয়েও। গ্রুপ স্টেজে গোলের মুখ দেখেননি ইউরোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ইয়ান ওব্লাকদের স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে যখন তিনি মাঠে নামছেন, তখন তার সামনে অনেক দায়িত্ব। শুধু নিজের গোল নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আরো একবার ইউরো ছুঁয়ে দেখা। প্রথম স্বপ্নটা পূর্ণ হলো না এখনো। কিন্তু তাতেও জয় আটকাল না পর্তুগালের। স্লোভেনিয়াকে হারিয়ে ইউরোর দৌড়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল তারা।
প্রত্যাশামতোই একতরফা ম্যাচ শুরু করেছিল ২০১৬-র ইউরো জয়ীরা। মাঝমাঠের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছিলেন ভিটিনহারা। কিন্তু সেই রোনালদো ছাড়া যে কেউই গোলের ধারেকাছে পৌঁছতে পারলেন না। ৭ মিনিটে রাফায়েল লিয়াওয়ের পাস থেকে গোলের সুযোগ এসে গিয়েছিল সিআর৭-র কাছে। কোনো মতে বাঁচান স্লোভেনিয়ার ডিফেন্ডার। বাকি সবকটি আক্রমণই ছিল রোনালদোকে সামনে রেখে। কখনো তার হেড বাঁচালেন গোলকিপার ওব্লাক। কখনো অল্পের জন্য বলে মাথা ছোঁয়াতে পারলেন না। তার একটা দুরন্ত ফ্রি কিক বারের সামান্য উপর দিয়ে উড়ে যায়। মূহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল ২০১৮-র বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ওই অনবদ্য গোল ফিরতে চলেছে। উল্টা দিকে কিছু বিচ্ছিন্ন প্রতিআক্রমণ ছাড়া কিছুই করার ছিল না বেঞ্জামিন সেসকোদের। কিন্তু তাও আটকে গেল পেপে-দিয়াজের জুটির কাছে।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই ঘটনা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, রোনালদোকে লক্ষ্য করে বল তুলে দেয়া ছাড়া গোলের মুখ খোলা একপ্রকার অসম্ভব। দুই উইঙ্গার রাফায়েল লিয়াও আর বার্নার্দো সিলভা সেভাবে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারলেন না। রোনালদোর আরও একটি ফ্রি-কিক ফিরল ওব্লাকের শরীরে ধাক্কা খেয়ে। বরং গতিতে পেপেকে পিছনে ফেলে গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেসকো। কিন্তু বল লক্ষ্যে রাখতে পারলেন না। নাহলে সেখানেই ম্যাচের ফলাফল লেখা হয়ে যেত। শেষ মুহূর্তে ফের সুযোগ এসে গিয়েছিল রোনালদোর কাছে। বাঁ পায়ের জোরাল শট বাধা পেল ওব্লাকের গায়ে।
নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর সেখানেই অপেক্ষা করেছিল আসল নাটক। পেনাল্টি আদায় করে নিলেন পর্তুগালের দিয়েগো জোটা। নিতে এলেন সেই রোনালদো। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে যাকে বহুবার পরাস্ত করেছেন, সেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের গোলকিপারের কাছে থমকে গেলেন সিআর৭। তখনো নাটক শেষ হয়নি। পেপের ভুলে বল পেয়ে যান সেসকো। কিন্তু সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়েও ব্যর্থ স্লোভেনিয়ার স্ট্রাইকার।
ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। না, এবার ভুল হলো না। ওব্লাক যেদিকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, সেদিকেই নিখুঁত প্লেসিং। তার পর হাত জোড় করে ক্ষমাপ্রার্থনা। ওখানেই বোধহয় সমস্ত পর্তুগাল আর রোনালদোভক্তের আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেল। তার আগেই পেনাল্টি শুট আউটে স্লোভেনিয়ার একটি শট বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন কোস্তা। ফের তার হাতেই জয়রথ ছুটল। রোনালদোর পর ব্রুনো আর বার্নাদো সিলভার পেনাল্টিতে ম্যাচ জিতল পর্তুগাল। শাপমোচন হলো রোনালদোর। কিন্তু রয়ে গেল অসংখ্য প্রশ্ন। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। শিষ্য এমবাপ্পের গতি রুখতে ৪১ বছরের বুড়া ঘোড়া পেপে কি ভরসাযোগ্য? একটা বাধা কাটলেও কাঙ্ক্ষিত ইউরোর পথে অগ্নিপরীক্ষা অপেক্ষা করে আছে রোনালদোদের জন্য।