পঞ্চম দিনে লাঞ্চ বিরতির আগেই পাকিস্তানকে এলো মেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম এই সেশনে নিয়েছে ৫ উইকেট। তাতে জয়ের আশা নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করেছে সফরকারী দল।
জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া। শুরুতেই অধিনায়ক শান মাসুদকে বিদায় দিয়ে সেই চাওয়া পূরণ করেন হাসান মাহমুদ। শুরুর ধাক্কার পর বাবর আজম-আব্দুল্লাহ শফিক মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই প্রতিরোধ স্থায়ী হতে দেননি নাহিদ রানা। বাবরকে আজমকে বোল্ড করেন তিনি। পরের ওভারে সৌদ শাকিলের উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে ধস নামান সাকিব আল হাসান।
বিরতির আগে সাকিব আবারও আঘাত হানলে এবার ফেরেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক (৩৭)! কঠিন বিপদে পড়লে সেখান থেকে আগা সালমানও উদ্ধার করতে পারেননি। বরং বিপদ আরও বাড়িয়ে গেছেন। মিরাজ দ্রুত সময়ে সালমানকেও বিদায় দিলে ১০৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এখনও স্বাগতিকরা ৯ রানে পিছিয়ে। প্রথম সেশনের বিরতিতে যাওয়ার আগে তাদের স্কোর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১০৮ রান। ক্রিজে আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (২২) ও শাহীন আফ্রিদি (১)।
নাহিদের পর সাকিবের আঘাতে আরও বিপদে পাকিস্তান
শেষ দিন দ্রুত উইকেট তুলে পাকিস্তানকে কঠিন বিপদে করে ফেলার লক্ষ্যে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। লাঞ্চ বিরতির আগেই তুলে নিয়েছে পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেট। আগের ওভারে নাহিদ রানার আঘাতের পর এবার আঘাত হেনেছেন সাকিব আল হাসান। নতুন নামা সৌদ শাকিলকে শূন্যতে স্টাম্পড করিয়েছেন তিনি। তাতে পাকিস্তান ৬৭ রানে হারিয়েছে ৪ উইকেট। তখনও পাকিস্তান পিছিয়ে ছিল ৫০ রানে। সাকিবের ঘূর্ণি বল এগিয়ে খেলতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনেন শাকিল।
শূন্য রানেই ফিরতে পারতেন বাবর আজম। তাহলে পাকিস্তানকে আরও চেপে ধরার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু লিটন দাস শরিফুলের বলে আসা ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি। তাতে আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে খেলতে থাকেন বাবর। ৩৮ রান যোগও করেন তারা। এই জুটিকে অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি পেসার নাহিদ রানা। তার অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বাবর আজম বোল্ড হয়েছেন। তাতে পাকিস্তানি ব্যাটার ৫০ বলে ২২ রানে থেমেছেন।
শান মাসুদকে ফেরানোর পর বাবরের ক্যাচ ছাড়লেন লিটন
শান মাসুদকে ফেরানোর পরের ওভারে শরিফুলের বলে আরও একটি উইকেট তুলে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা হলে পাকিস্তানকে আরও চেপে ধরা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য নতুন নামা বাবর আজমের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল লিটন গ্লাভসেই জমাতে পারেননি। বাবরের তখন রান ছিল শূন্য।
দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের সাফল্য
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রানের পাহাড়ের পর দ্বিতীয় ইনিংস চাপে থেকে শুরু করেছে পাকিস্তান। গতকাল ৫ রানে হারায় প্রথম উইকেট। শেষ দিন সকালে বাংলাদেশ দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার আশাতেই ছিল। লক্ষ্য স্বাগতিকদের চাপে ফেলা। দ্বিতীয় ওভারে সেটা সম্ভবও করে ছাড়েন পেসার হাসান মাহমুদ। অধিনায়ক শান মাসুদকে কিপারের গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ার সাড়া দেননি। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটের কানায় লেগে গ্লাভসে জমা পড়েছে। শান মাসুদ ফেরার আগে ১৪ রান করেছেন।
ভালো কিছুর আশায় শেষ দিন শুরু বাংলাদেশের
রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে চালকের আসনে বাংলাদেশ। ১১৭ রানের লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই ৫ রানে উইকেট হারিয়েছে তারা। সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়েছেন শরিফুল।
টেস্টের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের মুঠোয় আসতে সবচেয়ে বড় অবদান মুশফিকুর রহিমের। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন এবং ডাবল সেঞ্চুরি প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু ৯ রান দূরে থাকতে আউট হন তিনি।
এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন তিনি। দুজনে যখন ক্রিজে জুটি বাঁধেন, তখনও বাংলাদেশ ১১৬ রানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তারা যোগ করেন ১৯৬ রান। মোহাম্মদ আলী জুটিটা ভেঙে দেন। তারপর শাহীন শাহ আফ্রিদি জোড়া আঘাত করেন এবং শেষটা করেন নাসিম শাহ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং জুটি ভাঙার পরও পাকিস্তানের দুই ব্যাটার অধিনায়ক শান মাসুদ ও আব্দুল্লাহ শফিকের পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশের পেসাররা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারা চতুর্থ দিন বিপদ ছাড়াই পার করেছেন।
পঞ্চম দিন রোমাঞ্চকর কিছুর আশায় শেষ দিনের খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ৯ উইকেট হাতে রেখে ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শুরু করেছে।
এর আগে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানে অলআউট হয়।
স্কোর
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ১১৩ ওভারে ৪৪৮/৬ ডিক্লে. (শাহীন ২৮*, মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৭১*, আগা সালমান ১৯, সৌদ শাকিল ১৪১, সাইম আইয়ুব ৫৬; শফিক ২, শান মাসুদ ৬, বাবর ০)
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৭.৩ ওভারে ৫৬৫/১০; লিড ১১৭ (নাহিদ ১*, জাকির ১২, শান্ত ১৬, মুমিনুল ৫০, সাদমান ৯৩, সাকিব ১৫, লিটন ৫৬, মুশফিক ১৯১, মিরাজ ৭৭, শরিফুল ২২)
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ৩৬ ওভারে ১০৮/৬ (রিজওয়ান ২২*, শাহীন ১*; সাইম ১, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, সৌদ শাকিল ০, শফিক ৩৭, সালমান ০)