সময়টা ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ক্রিকেটে তখন আনকোড়া এক দল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মুলতানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিল টাইগাররা। পাকিস্তানকে বাগেও পেয়েছিল মোহাম্মদ আশরাফুল-খালেদ মাহমুদ সুজনরা। কিন্তু শেষটা হয়েছিল চরম হতাশায়।
সেই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া জিম্বাবুয়ের রাসেল টিফিন ও শ্রীলঙ্কার অশোকা ডি সিলভার বাজে আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে ইনজামাম উল হকের অতিমানবীয় এক ইনিংসে ১ উইকেটের হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। ২৩২ বলে ১৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন ইনজামাম।
এমন হার মেনে নিতে না পেরে সেদিন মাঠেই অঝরে কেঁদে ফেলেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজনসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। জয়ের খুব কাছে গিয়েও হারের কারণে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুঃখ হয়েছিল এই মুলতান টেস্ট।
অবশেষে দীর্ঘ ২১ বছর পর সেই দুঃখ ঘুচালো বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে মুলতানের সেই ট্রাজেডি ঝেড়ে ফেলে ২৪ এ এসে রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের উৎসব করেছে সাকিব-শান্তরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের দাপুটে এক জয় তুলে নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে টস হেরে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের সেঞ্চুরিতে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। শাকিল করেন ২৬১ বলে ১৪১ রান। আর রিজওয়ান ২৩৯ বলে ১৭১ রানে অপরাজিত থাকেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকের সেঞ্চুরির সঙ্গে ৪ ফিফটিতে ৫৫৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ১১৭ রানের লিড পায় টাইগাররা। অল্পের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেন মুশফিক। ৩৪১ বলে ১৯১ রান আউট হন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে ১ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে পাকিস্তান। তাই এই টেস্ট যে ড্রয়ের দিকে যাচ্ছে এমনটায় অনুমেয় ছিল সবার। তবে ড্রয়ের পথে যাওয়া টেস্টে প্রাণ ফিরিয়ে আনে টাইগার বোলাররা। প্রথম সেশনেই পাকিস্তানের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান সাকিব আল হাসান-মেহেদি হাসান মিরাজরা।
এরই মাঝে বল হাতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন সাবেক বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের। রাওয়ালপিন্ডিতে শেষদিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট তুলে নেন সাকিব। এতেই নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হন সাকিব।
এরপর দ্বিতীয় সেশনে টাইগার বোলাররা আরও ৪ উইকেট তুলে নিলে ১৪৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮০ বলে ৫১ রান করেন রিজওয়ান। বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ ৪টি ও সাকিব নেন ৩টি উইকেট।
বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রান। এমন মামুলি টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আগ্রাসী শুরু করেন দুই টাইগার ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। পাক বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়ে মাত্র ৬ ওভার ৩ বলে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই দুই ওপেনার। জাকির ২৬ বলে ১৫ ও সাদমান ১৩ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
এতেই ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে ২১ বছরের অপেক্ষার পর মুলতানের সেই দুঃখ রাওয়ালপিন্ডিতে ঘুচালো বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই জয়ের ম্যাচে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মুশফিক। ম্যাচসেরার যে প্রাইজমানি তিনি পেয়েছেন তা বন্যার্তদের সহায়তায় দান করে দিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।