গতকালই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল বৃষ্টি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিন তেমন কিছুই হতে দেখা গেলো না। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্ট ৬ উইকেটে জিতে পাকিস্তানকে দুই টেস্টের সিরিজে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ (২-০) করার কীর্তি গড়েছে।
প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া টেস্টে প্রায় পুরোটা সময় চালকের আসনেই ছিল বাংলাদেশ। ১৮৫ রানের লক্ষ্যে গতকাল ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৪২ রান তুলে কাজটা এগিয়ে রেখেছিলেন দুই ওপেনার। পঞ্চম দিনের শুরুতে জাকির, সাদমান ফিরলেও জয়ের পথে সেটা বাধা হয়নি। শান্ত-মুমিনুলের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি জয়টাকে নিয়ে আসে দৃষ্টি সীমায়। বিরতির পর কাছাকাছি সময় শান্ত, মুমিনুল আউট হলে গতিটা যায় শুধু কমে। তখন শুধু জয়ের জন্য মুশফিক-সাকিবের ব্যাটে ধীরে ধীরে এগিয়েছে সফরকারী দল। তাদের ব্যাটে ভর করেই ৫৬তম ওভারে নিশ্চিত হয়েছে অসাধারণ এক টেস্ট জয়।
দেশের বাইরে এর আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জয়ের নজির আছে একটিই। ২০০৯ সালে সেটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে চুক্তি নিয়ে ঝামেলায় ক্যারিবিয়ানদের দলটির ছিল দ্বিতীয় সারির। তাই এবারই প্রথম পূর্ণশক্তির দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো নাজমুল হোসেন শান্তরা। ১০ উইকেটে প্রথম টেস্ট জিতে তারা ইতিহাস গড়েছিল। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলো ইতিহাস গড়া প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই টেস্টেই স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে বেধে দিয়ে নিজেরাই পড়ে গিয়েছিল ফলোঅনের শঙ্কায়। ২৬ রানে পতন হয় ৬ উইকেটের। তার পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাসের বিশ্ব রেকর্ড জুটি দলকে খাদ থেকে টেনে তুলে। লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে ২৬২ রান পর্যন্ত গেছে বাংলাদেশের স্কোর।
পাকিস্তান ১২ রানের লিড পেলেও সেটা কোনও কাজেই আসেনি। যার পেছনে বড় অবদান পেসারদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ দিন জয়ের মঞ্চ গড়ে দেন দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ। তাতে এবারই প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন পেসাররা। আর পাকিস্তানে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন হাসান মাহমুদ। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে। বাংলাদেশ পায় ১৮৫ রানের লক্ষ্য।
মারার চেষ্টায় ক্যাচ আউট মুমিনুল
জয় আসন্ন। প্রয়োজন আর ৩২ রান। ঠিক তখনই মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন মুমিনুল হক। আবরার আহমেদের বলে ৩৪ রানে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তাতে ১৫৩ রানে পড়েছে চতুর্থ উইকেট।
টানা দুই বলে দুই রিভিউ হারালো পাকিস্তান
শান্তকে আউটের পর হন্যে হয়ে উইকেট খোঁজার চেষ্টায় দুটি রিভিউ হারিয়েছে পাকিস্তান। ৪০তম ওভারে আবরার আহমেদের টানা দুই বলে লেগ বিফোরের আবেদন উঠলেও দুইবারই দেখা গেছে বল ব্যাট স্পর্শ করে গেছে। ফলে নষ্ট হয়েছে রিভিউ।
বিরতি থেকে ফিরেই আউট শান্ত
দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছেন শান্ত-মুমিনুল। তাদের জুটিতেই নির্বিঘ্নে শেষ হয় প্রথম সেশন। জয়ও চলে আসে নাগালে। ৬৩ রান দূরে থেকে লাঞ্চ বিরতিতে যান তারা। বিরতি থেকে ফিরে ৫৭ রানের সেই জুটি ভেঙেছে শান্তর বিদায়ে। শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ৩৮ রানে ফিরেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের সুবাস নিয়েই দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির শঙ্কা থাকলেও দিনের খেলা গড়িয়েছে কোনও ধরনের ঝামেলা ছাড়া। সকালের সেশনে প্রথম দিকে দুই ওপেনার জাকির, সাদমান আউট হলেও সমস্যা হয়নি। তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল-শান্ত মিলে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিতে জয়ের পথেই ছুটছেন। বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয়ের অপেক্ষায় রেখে লাঞ্চ বিরতিতে গেছেন তারা। প্রথম সেশন শেষে তাদের স্কোর ছিল ৩৪ ওভারে ২ উইকেটে ১২২ রান। জয়ের জন্য এখনও প্রয়োজন ৬৩ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৩ রানে ব্যাট করছেন। মুমিনুল ব্যাট করছেন ২০ রানে। এই সেশনে ২৭ ওভারে বাংলাদেশ দুই উইকেট হারিয়ে যোগ করেছেন ৮০ রান। এই সেশনে শান্ত-মুমিনুল জুটিতে যোগ হয়েছে ৫২ রান।
জীবন পাওয়ার পরই ফিরেছেন সাদমান
আগের ওভারেই জীবন পেয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। তার পর একই ওভারে চারও মেরেছেন। কিন্তু পরের ওভারে খুররামের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। সাদমানের বিদায়ে পড়েছে দ্বিতীয় উইকেট। খুররাম শেহজাদের হাফ ভলিতে শান মাসুদকে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ২৪ রানে ফিরেছেন তিনি।
জীবন পেলেন সাদমান
ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ১৭তম ওভারে মির হামজার বলে আবারও উইকেট হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। ওপেনার সাদমান ব্যাক অব লেংথের বলে আলগা শট খেলতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু সালমান সেটা হাতে জমাতে পারেননি। তখন ১৭ রানে ব্যাট করছিলেন সাদমান।
জয়ের লক্ষ্যে গতকালকেই আগ্রাসী সূচনা করেছিলেন ওপেনার জাকির হাসান। শেষ দিনেও সাদমান ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে একই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু ১৩তম ওভারে মির হামজার বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ফিরেছেন ৪০ রানে। তাতে ভেঙেছে ৫৮ রানের ওপেনিং জুটি।
ঐতিহাসিক এক টেস্ট সিরিজ জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আগের দিন বিনা উইকেটে ৪২ রানে দিন শেষ করেছিলেন দুই ওপেনার। শেষ দিন রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট জিততে সফরকারীদের হাতে আছে সবকটি উইকেট।
দেশের বাইরে এর আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জয়ের নজির আছে একটিই। ২০০৯ সালে সেটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে চুক্তি নিয়ে ঝামেলায় ক্যারিবিয়ানদের দলটির ছিল দ্বিতীয় সারির। তাই এবারই প্রথম পূর্ণশক্তির দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের অপেক্ষায় নাজমুল হোসেন শান্তরা। ১০ উইকেটে প্রথম টেস্ট জিতে তারা ইতিহাস গড়েছিল। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের অপেক্ষা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ দিন বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছিলেন দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ। তাতে এবারই প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশর পেসাররা। আর পাকিস্তানে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন হাসান মাহমুদ। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে। বাংলাদেশ পায় ১৮৫ রানের লক্ষ্য।
আবহাওয়ার কথা মাথায় নিয়ে তার পর দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান আগ্রাসী সূচনা করেন। ৭ ওভারেই তুলে নেন ৪২। আজকেও একই লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা।
স্কোর: পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৮৬.১ ওভারে ২৭৪/১০ (হামজা ০*, আগা সালমান ৫৪, আবরার ৯, আলী ২, খুররাম শাহজাদ ১২, বাবর আজম ৩১, মোহাম্মদ রিজওয়ান ২৯, আব্দুল্লাহ ০, শান মাসুদ ৫৭, সাইম আইয়ুব ৫৮, সৌদ শাকিল ১৬)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৮.৪ ওভারে ২৬২/১০ (হাসান ১৩*; নাহিদ ০, লিটন ১৩৮, জাকির ১, সাদমান ১০, শান্ত ৪, মুমিনুল ১, মুশফিক ৩, সাকিব ২, মিরাজ ৭৮, তাসকিন ১)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬.৪ ওভারে ১৭২/১০ (সালমান ৪১*, হামজা ৪*; আবরার ২, আলী ০, রিজওয়ান ৪৩, বাবর ১১, মাসুদ ২৮, সাইম ২০, খুররাম ০, শফিক ৩)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ ওভারে ১৮৫/৪ (মুশফিক ২২*, সাকিব ২১*; জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।