দ্বিতীয় টেস্ট বাঁচাতে শেষ দিনে লড়াই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ দিনে প্রথম সেশনের মধ্যেই দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে গেছে সফরকারীরা। লাঞ্চ বিরতির আগের শেষ ওভারে মুশফিকুর রহিমের আউট হতেই সমাপ্ত হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। ৯৪ রানের লিড পাওয়ায় ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন এখন ৯৫ রান।
বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে সাদমান ইসলামের ফিফটি। বাকিরা শুধু আসা-যাওয়া করেছেন বাজে শট সিলেকশনে। শেষ দিনের শুরুতে মুমিনুল ফিরলেও প্রতিরোধ গড়েছিলেন শান্ত-সাদমান। কিন্তু এই প্রতিরোধ ভাঙতেই মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। ৯১ রানে স্কোর ছিল তিন উইকেট। সেখান থেকে ৯৪ রানে সাত উইকেট হারিয়ে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলে তারা। শেষে দিকে মুশফিকুর কিছুক্ষণ লড়াই করলেও লাঞ্চ বিরতির আগ পর্যন্তই টিকেছে তার প্রতিরোধ। তাকে ৩৭ রানে বোল্ড করেছেন বুমরা।
ভারতের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন বুমরা। ৩৪ রানে সম সংখ্যক উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা। তিনিই দ্রুত ধস নামানোর কারিগর। তাছাড়া ৫০ রানে তিনটি উইকেট নেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। একটি নিয়েছেন আকাশ দীপ।
তাইজুলের আউটে শেষের পথে বাংলাদেশের ইনিংস
মিরাজের আউটে লেজ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের। স্পিনার তাইজুলও মুশফিককে সঙ্গ দিতে পারলেন না। ৪১তম ওভারে বুমরার বলে শূন্যতে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেছেন তিনি। তাইজুলের আউটে ১৩০ রানে নবম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে শেষের কাছে পৌঁছে গেছে সফরকারীদের ইনিংস। অবশ্য এই আউটের বিপরীতে রিভিউ নিয়েছিলেন তাইজুল। লাভ হয়নি তাতে।
মিরাজের বিদায়ে পড়লো অষ্টম উইকেট
৯৪ রানে পড়ে সপ্তম উইকেট। শেষ স্বীকৃত জুটিতে মেহেদী হাসান মিরাজও তেমন কিছু করতে পারলেন না। উল্টো জসপ্রীত বুমরার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে ফিরেছেন। তাতে ১১৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে বাংলাদেশ।
শূন্যতে ফিরলেন সাকিব
৯১ রানে ছিল তিন উইকেট। সেখান থেকে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ৩ রানের মধ্যেই হারিয়েছে বাকি চার উইকেট। ৯৪ রানের মধ্যে নেই ৭ উইকেট। সাদমান ছাড়া বাকি সবাই শিকার হয়েছেন জাদেজার। সর্বশেষ সাকিব আল হাসান জাদেজাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফিরেছেন।
ফিরলেন লিটন, বাংলাদেশ হারালো ষষ্ঠ উইকেট
শান্ত-সাদমানের জুটি ভাঙার পর মুহূর্তেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। টানা তিন ওভারে ফিরেছেন শান্ত, সাদমান ও সর্বশেষ লিটন দাস। তাতে ভীষণ বিপদে পড়েছে সফরকারীরা। ৩০তম ওভারে নতুন নামা লিটন দাসও কোনও অবদান রাখতে পারলেন না। জাদেজার টার্ন ও বাউন্সে ১ রানে গ্লাভসবন্দি হয়েছেন তিনি। তাতে ৯৪ রানে বাংলাদেশ হারায় ৬ উইকেট।
ফিফটির পর আউট সাদমানও
শান্তর বিদায়ের পর পর টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। তাতে প্রথম বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে ভারতের মাটিতে হাফসেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। সাদমান ফিফটি তুলে নেন ৯৯ বলে। তার আগে ২৬.১ ওভারে এলবিডাব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার্স কলে বেঁচেছেন। তবে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর ২৮.৪ ওভারে মনোযোগ হারিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে গালিতে জয়সওয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ফেরার আগে ১০১ বলে ৫০ রান করেছেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ১০টি চার।
শান্তর বিদায়ে ভাঙলো জুটি
৩৬ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। তার পর থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন সাদমান-শান্ত। চতুর্থ উইকেটে তাদের জুটি পঞ্চাশও ছাড়িয়েছে। ৫৫ রানের জুটি ভেঙেছে নাজমুল হোসেন শান্তর ভুল শট সিলেকশনে। ২৭.২ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। তখন অবশ্য লেগ স্টাম্পও যথেষ্ট ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফলাফল বল টার্ন করে আঘাত করে শান্তর লেগ স্টাম্পে। তাতে ৩৭ বলে ১৯ রানে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
লিড নিলো বাংলাদেশ
তৃতীয় ওভারে মুমিনুল হক ফেরার পর লিড নিতে বেশি সময় লাগেনি বাংলাদেশের। ২০তম ওভারেই লিড পেয়ে যায় সফরকারীরা। ২০তম ওভারে স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৫৭।
দিনের তৃতীয় ওভারেই আউট মুমিনুল
ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে শেষ দিনের শুরুতেই বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে ক্যাচ আউট হয়েছেন আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্লিপে রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। তাতে ৮ বল খেলা মুমিনুল ফিরেছেন মাত্র ২ রানে।
শেষ দিনের লড়াইয়ে বাংলাদেশ
কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে মাঠে নেমেছিল। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জোড়া আঘাতে সফরকারীরা দুই উইকেট হারিয়ে চাপে রয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসে। ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে তারা পঞ্চম ও শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছে।
অশ্বিন টানা দুই ওভারে জাকির হাসান ও নাইটওয়াচম্যান হয়ে মাঠে নামা হাসান মাহমুদকে মাঠছাড়া করেন। দুইবার জীবন পাওয়া সাদমান ৭ রানে খেলছেন। তার সঙ্গে ক্রিজে আছেন মুমিনুল হক। প্রথম ইনিংসের সেরা বাংলাদেশি ব্যাটার এখনও রানের খাতা খুলতে পারেননি।
অন্তত ৯৮ ওভার খেলা হওয়ার কথা আজ। বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করে ম্যাচ জেতার লক্ষ্যে গতকাল প্রথম ইনিংসে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়েছে ভারত। তাই স্কোর: বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ ওভারে ১৪৬/১০ (খালেদ ৫*;, হাসান ৪, জাকির ১০, মুমিনুল ২, শান্ত ১৯, সাদমান ৫০, লিটন ১, সাকিব ০, মিরাজ ৯, তাইজুল ০, মুশফিক ৩৭); বাংলাদেশের লিড ৯৪।
ভারত প্রথম ইনিংসে ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫/৯ ডি., লিড ৫২ (বুমরা ১*; রোহিত ২৩, জয়সওয়াল ৭২, গিল ৩৯, পান্ত ৯, কোহলি ৪৭, জাদেজা ৮, অশ্বিন ১, লোকেশ রাহুল ৬৮, আকাশ দীপ ১২)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৪.২ ওভারে ২৩৩/১০ (মুমিনুল ১০৭*; শান্ত ৩১, সাদমান ২৪, জাকির ০, মুশফিক ১১, লিটন ১৩, সাকিব ৯, মিরাজ ২০, তাইজুল ৫, হাসান ১, খালেদ ০)এদিন জয় পেতে সব কিছু করতে চাইবে স্বাগতিক দল।