বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকতে না পারায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১২

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সাকিব আল হাসান দেশে ছিলেন না। দেশে না থাকলেও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে সতীর্থ ক্রিকেটারদের সবাইকে কম বেশি সরব থাকতে দেখা গেছে। আন্দোলনে সাকিবের চুপ থাকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এত দিন চুপ থাকার পর বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে। গত জুন ও জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বহু শিক্ষার্থী আহত ও নিহত হন। এই সময়টাতে দেশের অনেকেই ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেন। বাদ যাননি ক্রিকেটাররাও, বেশিরভাগই ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কেবল সরকারদলীয় দুই ক্রিকেটার সাকিব ও মাশরাফি বিন মুতর্জা ছিলেন চুপ। এর মধ্যে কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে কোটা আন্দোলন নিয়ে ভক্তের এক প্রশ্নে সাকিবের উত্তর পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এছাড়া বাংলাদেশে যখন পুলিশের গুলিতে নিহতের মিছিল লম্বা হচ্ছিল, তখন সাকিব তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সাফারিতে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে সেসব ছবিও পোস্ট করেন তার স্ত্রী। কঠিন সময়ে সাকিবের এরকম কর্মকাণ্ড ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ।
ব্যাপক সমালোচনার মাঝে এতদিন চুপ থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। পোস্টের শুরুতেই দেশের মানুষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্বদরবারে সমাদৃত করেছে।’
এরপরই আন্দোলনে নিহত শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন আওয়ামী লিগের সাবেক সংসদ সদস্য, ‘শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে  শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজনহারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোনো কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।’ 
এরপর সংকটকালীন সময়ে পাশে থাকতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাকিব, ‘এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম। আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।’
সাকিব আল হাসান প্রথমবারের মতো আওয়ামী লিগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হলেও খুব বেশি সময় তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে থাকতে পারেননি। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি আন্দোলনের সময়ও তিনি দেশে ছিলেন না। নিজের রাজনীতিতে নাম লেখানোর প্রেক্ষাপট নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন- আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড়- আমাকে শক্তি জুগিয়েছে। আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই।’ 
চলতি মাসের ১৬ তারিখে বাংলাদেশ সফরে আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সফরে ঢাকা টেস্টের মধ্য দিয়ে সাকিব লাল বলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন। ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে নিজের ক্রিকেট জার্নির শেষটা রাঙানোর ইচ্ছেটা আবার জানিয়ে দিলেন তিনি, ‘আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা।’ 
সাকিব শেষ করেছেন এভাবে, ‘এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমায় ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে। আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি- এই বিদায়বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক আমি নই, আপনারা!’