নিয়মভঙ্গ, দায়িত্বে অবহেলা ও সিনিয়র ক্রিকেটারকে শারীরিক হেনস্তার অভিযোগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে গত মঙ্গলবার বরখাস্ত করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পাশাপাশি জাতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচকে শোকজ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিন দিন পর আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন লঙ্কান কোচ।
গত দুইদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বাংলাদেশ ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন হাথুরুসিংহে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না করে শুধু গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। সেখানে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডন করেন হাথুরু।
কী বিষয়ে বিবৃতি, সেটা শুরুতেই উল্লেখ করে হাথুরু বলেন, ‘আমার এই চিঠি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃক ২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালীন একজন খেলোয়াড়ের উপর কথিত নির্যাতন ও অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত ছুটি নেওয়া প্রসঙ্গে আমার সততা এবং পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোর বিষয়ে। আমি বিশ্বাস করি যে, ঘটনাগুলো স্পষ্ট করা জরুরি। আমি অভিযোগগুলো দেখেছি এবং আমার দিক উপস্থাপন করছি।’
হাথুরুর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো, বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা।
ওই ঘটনা ব্যাখ্যা করে হাথুরু বলেন, ‘প্রথমত কথিত ঘটনাটি খেলোয়াড়দের ডাগআউট বা ড্রেসিং-রুমে ঘটেছিল। এটি এমন জায়গা, যা বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালীন সার্বক্ষণিক নজরদারীতে থাকে। সেখানে ৪০ থেকে ৫০টিরও বেশি ক্যামেরা থাকে খেলার মুহূর্ত ধারণ করার জন্য। এ ব্যাপারে আমি কোনো অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাইনি বা কোনো সাক্ষীও পাইনি।’
বিষয়টি স্পষ্ট করতে হাথুরু আরও বলেন, ‘যেভাবে তোলা হচ্ছে, ঘটনা ততটা গুরুতর নয়। এটি বিভ্রান্তিকর যে, জড়িত খেলোয়াড় উল্লেখিত ইভেন্টের পর টিম ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। যদি অভিযোগ হয়েও থাকে, আমাকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসা না করায় আমি অবাক হয়েছি। আমার মতামত জানতে চাওয়া হয়নি। অভিযোগের কয়েক মাস পর কেন একজনের ইউটিউবে এটি তোলা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হয়।’
লঙ্কান কোচের বিষয়ে আরও একটা অভিযোগ হলো- তিনি বিসিবির সঙ্গে চুক্তির নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন।
এ বিষয়ে হাথুরু বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করতে চাই, আমি যখনই ব্যক্তিগত ছুটি নিয়েছি তখনই সিইও এবং ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অনুমোদন চেয়েছি এবং পেয়েছি। কোনো সময় বিসিবি আমাকে জানায়নি যে তারা আমার ছুটির ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। আমি যতবার ছুটি চেয়েছি, বিসিবি তা মঞ্জুর করেছে। তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো সময় ছুটিতে যাইনি।’
লঙ্কান কোচ আরও বলেন, ‘নতুন বোর্ড সদস্যরা সরকারি ছুটি হিসাবে রাখেননি। যেমন ঈদের ছুটি বা সাপ্তাহিক শুক্রবারের ছুটি। যখন সরকারি ছুটি নেইনি তখন তারা সেটার কৃতিত্ব দেয়নি। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, আমি শুক্রবার কাজের জন্য বদলি ছুটি পাওয়ার কথা। একজন বিসিবি কর্মী হিসেবে আমি শুক্রবারের ছুটি এবং বৃহস্পতিবার অর্ধ দিবস ছুটি পাই।’
বিপিএল চলাকালীন ছুটিতে ছিলেন হাথুরু, সেটিও হিসাবে রেখেছে বিসিবি উল্লেখ করে লঙ্কান কোচ বলেন, ‘এটাও উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সময় বিদেশি কোচদের ছুটি নেওয়া সাধারণ রীতি। এটি আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। আমার মেয়াদের আগে বিদেশি কোচের জন্যও এটি প্রতিষ্ঠিত রীতি। বিপিএল চলাকালীন ছুটি চুক্তি অনুসারে ছুটি হিসেবে বিবেচিত হবে না।’
বিবৃতির শেষ অংশে হাথুরু বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।
হাথুরু বলেন, ‘অভিযোগগুলো আমার কাছে পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। নতুন সভাপতি (ফারুক আহমেদ) প্রথম দিনই হেড কোচকে অপসারণের ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেন যে, এটা বিসিবির জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
দুই মেয়াদে বাংলাদেশে ক্রিকেটে কাজ করা এই কোচ আরও বলেন, ‘নতুন হেড কোচ নিয়োগের মাত্র চার ঘণ্টা আগে শোকজ নোটিশ পেয়ে আমি হতবাক হয়েছিলাম। নোটিশ দিয়ে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আমারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে।’
নিজের সুনাম রক্ষার জন্য যা কিছু করা দরকার, সবই করবেন বলে উল্লেখ করেছেন হাথুরু। তিনি বলেন, ‘আমি সুনাম রক্ষার্থে এবং এই বিষয়ে যেকোনো তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবো। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে। যাতে আমি যে খেলা ভালোবাসি তাতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারি।’