তিন স্পিনার ফর্মুলা অকার্যকর, ভুল কম্বিনেশনেই সর্বনাশ বাংলাদেশের!

স্পোর্টস ডেস্ক
  ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২২:২৯

বাংলাদেশ কি এক পেসার নিয়ে খেলতে নেমে ভুল করেছে? হাসান মাহমুদের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ কিংবা নাহিদ রানার কেউ থাকলে কি আরও ভালো হতো না? আজ সোমবার মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রায় সবার মুখেই এ প্রশ্ন।
ভাববেন না, এ প্রশ্ন এমনি এমনি উঠেছে। খেলার চালচিত্রই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশ দলে একজন পেসার কম। একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানে মিলবে এ প্রশ্নের জবাব।
গত দুইদিনে দুই দলের ২৩ উইকেটের পতন ঘটেছে। তার ৭টি নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম (৫টি) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২টি)। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার কেশভ মহারাজ (৪টি) ও ড্যান পিট (১) মিলে নিয়েছেন ৫টি।
মানে ১২ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন দুই দলের স্পিনাররা। আর সেখানে বাংলাদেশের একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদ (৩) আর দুই প্রোটিয়া পেসার রাবাদা (৫) এবং উইয়ান মুলদার (৩) মিলে পেয়েছেন ১১ উইকেট।
বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে কথার শেষ নেই। সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকরা এমন ছন্নছাড়া, শ্রীহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন টেস্ট ব্যাটিং করেছেন, যা সচরাচর অন্য দলের টেস্ট খেলায় দেখা যায় না।
প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ওপেনার সাদমান, ওয়ান ডাউন মুমিনুল চরম ব্যর্থ। আর অধিনায়ক শান্তও সেট হয়ে বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন।
একদিকে এমন শ্রীহীন ব্যাটিং, তার ওপর বাংলাদেশ ধুঁকছে একজন পেসার কম নিয়ে খেলায়। বাংলাদেশের ৩ স্পিনার নিয়ে খেলার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্তত প্রথম ইনিংসে ৩ স্পিনার খেলানোর কোনোই যথার্থতা মেলেনি।
বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম ৫টি আর অফস্পিনার মিরাজ ২ উইকেট দখল করলেও অপর অফস্পিনার নাইম হাসান কিছুই করতে পারেননি। ১৮ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য নাইম। পিচে স্পিনারদের জন্য সাহায্য থাকলে নাইমের তো একটি উইকেট হলেও পাওয়ার কথা।
সেটি ছিল না হয়তো। যদি স্পিনাররা বাড়তি সাহায্য না-ই পান, তবে এই পিচে কেন একজন পেসার কম নিয়ে খেলে তিন স্পিনারে একাদশ সাজানো? প্রশ্নটা ওঠাই স্বাভাবিক।
আগের দিন (রোববার) দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও আজ সোমবার দ্বিতীয় দিন কাইল ভেরেন ও উইয়ান মুলদারের হাত ধরে ১১৯ রান পেয়ে শেষ পর্যন্ত ৩০০’র ঘরে পৌঁছে গেছে। ভেরেইন শতরান করেছেন। আর মুলদার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকিয়েছেন।
২২৭ রানে ৮ উইকেট পতনের পর নবম ও দশম উইকেটে আরও ৮১ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পেসার হাসান মাহমুদ পর পর দুই বলে মুলদার ও কেশভ মহারাজকে আউট করেছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে অফস্পিনার ডেন পিটকে সাথে নিয়ে ভেরেইন আরও ৬৬ রান যোগ করলে ৩০০’তে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
ওই সময় একজন পেসার থাকলে হয়তো অন্য প্রান্তে চাপ দেওয়া যেত। কিন্তু তা হয়নি। দিন শেষে তাই এক পেসার নিয়ে খেলাটা অযৌক্তিকই মনে হলো।
তার সাথে আর একজন পেসার থাকলে ভালো হতো কিনা? তিনি নিজে একজন পেসার সঙ্গীকে মিস করেছেন কিনা? সংবাদ সম্মেলনে সে প্রশ্ন হাসান মাহমুদ বেশ কৌশলে এড়িয়ে গেলেন। বললেন, ‘আমি আমার কাজটি করার চেষ্টা করেছি। আর স্পিনার তাইজুল ভাইও বেশ ভালো বোলিং করেছেন।’
হয়তবা টিম কম্বিনেশন নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি এ তরুণ। তবে ১০৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও দক্ষিণ আফ্রিকা যখন শেষ ৪ উইকেটে ২০০ রান যোগ করে এবং বাংলাদেশের তিন নম্বর স্পিনার নাইম হাসান যখন উইকেটশূন্য থাকেন, তখন কি আর বুঝতে বাকি থাকে যে, বাংলাদেশ একজন পেসার কম নিয়ে অনেক বড় ভুল করেছে।
আর সে ভুলের কারণেই এইডেন মার্করামের দল ২০২ রানের লিড পেয়েছে। আজ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১০১ রান করলেও এখনো ১০১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।