মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যখন এক সপ্তাহ বাকি, ঠিক তখনই অভিবাসীদের নিয়ে আরেক দফা বিতর্কিত মন্তব্য করে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এক সমাবেশে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং অভিবাসীদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনার কথা বলেন।
ট্রাম্প তাদের ‘দুষ্টু ও রক্তপিপাসু’ বলেও অভিহিত করেন, যা তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এদিকে ম্যাডিসন স্কয়ারের এ সমাবেশে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়ে সবার মনোযোগ কেড়ে নেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া। যে বক্তব্যে মেলানিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া’ এবং ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে আশার বাণীও শোনান। অন্যদিকে একই দিনে পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশে জেন জি ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
ট্রাম্পের বেশকিছু অশ্লীল এবং বর্ণবাদী মন্তব্য দিয়ে শুরু হয় নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে রোববারের সমাবেশটি। বক্তব্যের শুরুতে ট্রাম্প সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘চার বছর আগের চেয়ে কি এখন আপনারা ভালো আছেন?’ এ সময় জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘না।’ ট্রাম্প বলেন, ‘এক দিন আমি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাসন কর্মসূচি শুরু করব। আমি প্রতিটি শহর উদ্ধার করব, যেগুলো অভিবাসীরা দখল করেছে।’ ৫ নভেম্বরের ভোটে জয়ী হলে অপরাধীদের হামলা থেমে যাবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস খুবই কম আইকিউ সম্পন্ন (বুদ্ধির সূচক)।’
সমাবেশে নিউইয়র্কের একসময়ের মেয়র ও ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জিলিয়ানি বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় কমলা হ্যারিস সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়েছেন। কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কৌতুক অভিনেতা টনি হিঞ্চক্লিফ বক্তব্যে স্থূল ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘লাতিনোরা সন্তানের জন্ম দিতে ভালোবাসে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিবীয় অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোকে ‘আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ’ বলেন। হিঞ্চক্লিফের এ বক্তব্যের পর পুয়ের্তো রিকোর সংগীতশিল্পী রিকি মার্টিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে স্প্যানিশ ভাষায় দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ‘তারা আমাদের নিয়ে এমনটাই ভাবে।’
যদিও পুয়ের্তো রিকোর বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। পুয়ের্তো রিকো থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে চলে গেছেন, তারা নির্বাচনে পুরোপুরি অংশ নিতে পারেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দা। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ইমেইলে জানান, বিপজ্জনক বিভাজন ও অবমাননাকর বার্তার প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনী সমাবেশে। সেইসঙ্গে হোয়াইটস হাউস থেকেও অভিবাসী নিয়ে ট্রাম্পের এ বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়।
ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের এ সমাবেশে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়ে চমক দেখান সাবেক ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে অনেকবারই মঞ্চে শুধু দেখা দেওয়া নয়, বক্তব্যও দেন তিনি। কিন্তু এবারের নির্বাচনের প্রচারের শুরুর দিকে দুয়েক বার মেলানিয়াকে দেখা গেলেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। আর তারপর থেকে যেন অনেকটা হাওয়া হয়ে গেছেন তিনি। তাকে অনেকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখনো মেলানিয়ার দেখা না মেলায় উঠছে অনেক ধরনের প্রশ্ন। আর এসবের উত্তর দিতেই রোববারের এ সমাবেশে যেন উপস্থিত হন সাবেক এ ফার্স্টলেডি। সমাবেশ শুরু হওয়ার চার ঘণ্টা পর মেলানিয়া মঞ্চে আসেন। ট্রাম্পের হাত ধরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ এবং টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক তাকে মঞ্চে স্বাগত জানান। ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশে দেওয়া প্রথম বক্তব্যে মেলানিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া’ এবং ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর আশার বাণী শুনিয়ে সাবেক এই ফার্স্টলেডি বলেন, ‘চলুন, আমরা মার্কিন মহিমার ওপর ভিত্তি করে একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে পথচলা শুরু করি। আসুন, আমরা এ মুহূর্তটিকে আঁকড়ে ধরি এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেশ গড়ি। এমন ভবিষ্যৎ, যেটা আমাদের প্রাপ্য।’ এ সময় পিনপতন নীরবতার মধ্যে তার বক্তব্য শোনেন দর্শক-শ্রোতারা।
অন্যদিকে রোববার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস। পেনসিলভানিয়ায় দেওয়া বক্তব্যে কমলা জেন জি প্রজন্মের ভোটারদের গুরুত্ব দেন এবং তাদের কাছে টানার চেষ্টা করেন। তাদের উদ্দেশে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি কিছু সময় কথা বলতে চাই, বিশেষ করে এখানে ও আমেরিকাজুড়ে তরুণ নেতাদের সঙ্গে। আমাদের এখানে জেন জি প্রজন্মের থেকে কেউ আছে? আমি তোমাদের ওপর নির্ভর করছি কারণ আমি তোমাদের সম্পর্কে যে জিনিসটি পছন্দ করি, তা হলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ধৈর্য না ধরা। আমি তোমাদের দেখছি ও তোমাদের শক্তি দেখছি।’ এরপর কমলা তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘তোমরা কি তোমাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে প্রস্তুত?’ এ সময় অনেক তরুণ-তরুণী হ্যাঁ বলে হাত তুলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।