যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল-হাসপাতাল, ধর্মীয় উপসানালয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান সমাবেশসহ সর্বস্থান থেকে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাচ্ছে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর দিনই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারে আইসকে এ ক্ষমতা দিবেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম এনবিসি নিউজ একটি প্রতিবেদনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে গণ নির্বাসনের এ পরিকল্পনাটি তুলে ধরে।
এদিকে অনিবন্ধিত (অনাগরিক) অভিভাবকদের সাথে ইউএসএ জন্মগ্রহণকারী সিটিজেন সন্তানদেরও গণ ডিপোর্টেশন করা হবে। । টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটি জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি আরো জানান, গণ ডিপোর্টেশনের কার্যক্রম যারা অমান্য করবে তাদের বরখাস্ত করা হবে।
অপর দিকে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস ট্রাম্পের গণ ডিপোর্টেশন কার্যক্রমকে বাস্তবায়নে স্যাঙ্কচুয়ারি সিটির আইন শিথিলতায় একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করবেন। এর মাধ্যমে নিউইয়র্কে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীকে সহজেই গ্রেপ্তার করতে পারবে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা।
এনবিসি নিউজের ওই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্যানুসারে জানা গেছে , ২০১১ সাল থেকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় গণ ডিপোর্টশনে স্কুল-হাসপাতাল, ধর্মীয় উপসানালয় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান সমাবেশসহ সর্বস্থান থেকে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের ক্ষমতা সংকুচিত করা হয় ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের। আইস এজেন্টরা এসব স্থান থেকে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার ও অভিযানে প্রবেশের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হতো। এরপর থেকে আইস এজেন্টরা স্কুল-হাসপাতাল, ধর্মীয় উপসানালয় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান সমাবেশে অবৈধ সন্ধান গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করতে পারতোনা। ১৩ বছর পর অবৈধ অভিবাসীদের গণ ডিপোর্টশনে আবারো আইস এজেন্টদের অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারে বিশেষ ক্ষমতা দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর দিনই নির্বাহী আদেশ জারীর পরিকল্পনা করেছেন। এনবিসি নিউজ ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পরদিন গণ ডিপোর্টশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে একাধিক নির্বাহী আদেশ জারী করবেন। নির্বাহী আদেশের পরপরই এসব আদেশ কার্যকর করা হবে। এসব আদেশের মধ্যে থাকবে গণ ডিপোর্টশন ও সীমান্ত সীল কার্যক্রম। এতে করে ১৩ বছর পর স্কুল-হাসপাতাল, ধর্মীয় উপসানালয় ও বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সমাবেশ এবং কোন ধরণের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে আইস। এরপর সকল প্রক্রিয়া শেষে গণ ডিপোর্টেশন করতে পারবে তারা। এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
একইদিন টাইম ম্যাগাজিনের একান্ত সাক্ষাতাকারে অনিবন্ধিত (অনাগরিক) অভিভাবকদের সাথে ইউএসএতে জন্মগ্রহণকারী সিটিজেন সন্তানদেরও গণ ডিপোর্টেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইউএসএতে জন্মগ্রহণকারী সিটিজেন সন্তানদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করার নীতি পুনরুদ্ধার করছেন কিনা? টাইম ম্যাগাজিনের এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, পরিবার থেকে আলাদা করার নীতি এটা আমার ছিলোনা। এটা ওবামা করেছিলেন। তিনি তাদের জন্য কারাগার তৈরী করেছিলেন। ওবামার ক্ষমতাকলীন ২০১৪ সালের দিকে ফিরে দেখেন এটা কার নীতি ছিলো।
তিনি আরো বলেন, ডেমোক্র্যোটদের সময় ৩২৫০০০ হাজার শিশু জন্ম নিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছে যাদের অভিভাবকরা অবৈধ অভিবাসী। আমি ওই শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করবোনা। পরিবারের সাথেই তাদেরকে নির্বাসিত করবো। আমরা চাই বৈধভাবে সবাই এদেশে আসুক, জেল থেকে আসুক এটা চাইনা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমার প্রশাসনের অধীনস্থ সবাই দেশের ও প্রেসিডেন্টের নীতির অনুগত। তাই আমাদের সকল নীতির সাথে তাদের কাজ করতে হবে। যেটা গণ ডিপোর্টেশন কিংবা অন্যান্য যত সিদ্ধান্ত হোক তা পালনে তারা কাজ করবে। আর এটা যারা অমান্য করবে তাদের বরখাস্ত করা হবে আর যারা মানবে তাদের ইনটেন্সিভ সহায়তা দেওয়া হবে।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বরখাস্ত নাগরিকদের তাদের দেশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে সে সব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়াও সেসকল দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সব সহযোগিতা বন্ধ রাখা হবে।
অপরদিকে গত বুধবার ট্রাম্পের গণ ডিপোর্টেশন কার্যক্রমকে বাস্তবায়নে সীমান্ত জার হিসেবে খ্যাত টম হোম্যানের সাথে স্বাক্ষাত শেষে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে জানান, অনিবন্ধিত ও অপরাধীদের জায়গা নিউইয়র্কে হবে না। অবৈধদের নির্বাসনে আইস গ্রেপ্তারে কোন প্রতিব›িন্ধকতা ছাড়া অভিযান চালাতে পারে, তাই স্যাঙ্কচুয়ারি সিটির আইন শিথিলতায় একটি নির্বাহী আদেশ জারী করা হবে। এর মাধ্যমে নিউইয়র্কে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীকে সহজেই গ্রেপ্তার করতে পারবে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা।