ইমিগ্রান্টদের ভীতি উৎপাদনই কি ট্রাম্পের পুঁজি!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:২৩

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করা এবং দক্ষিণের সীমান্ত অতিক্রম করে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেও তার একই প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে এবার তিনি যে ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করা এবং বিদ্যমান ইমিগ্রেশন আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে আরো কঠোর ইমিগ্রেশন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাইডেন প্রশাসনে ইমিগ্রান্ট প্রবেশ সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছিল এবং তার চার বছর মেয়াদে ৮০ লাখের অধিক বিদেশি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, এমন রিপোর্ট শুধু রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা নয়, সাধারণ আমেরিকানদের পর্যন্ত শংকিত করেছে। কারণ তখন এসাইলামসহ অন্যান্য ইমিগ্রেশন আইনের প্রয়োগে শৈথিল্য লক্ষ্য করা গেছে, যার ফলে ডেমোক্রেটদের ইমিগ্রান্ট বান্ধব বলে বিবেচনা করা হয় এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় এলে অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যাও বেড়ে চলে।
কারণ এত বিপুল সংখ্যক অবৈধ ইমিগ্রান্টের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের ওপর কি ধরনের আর্থিক ও সামাজিক চাপ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। গত চার বছর ডেমোক্রেট প্রশাসনের গৃহীত ইমিগ্রেশন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন স্টেটের ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান উভয় দলের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সিটি বা স্টেটে ইমিগ্রান্টদের অস্বাভাবিক চাপের বিষয়ে অভিযোগ করেছে।

নিউইয়র্ক, শিকাগো, ডেনভার, লস অ্যাঞ্জেলেস, স্যান ফ্রান্সিসকোর মতো সিটির সাধারণ নাগরিকরাও তাদের সিটিতে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য ইমিগ্রান্টদের অধিক উপস্থিতিকে দায়ী করেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবং ইমিগ্রেশন বিরোধী রিপাবলিকান নীতির কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরই অবৈধ ইমিগ্রান্টদের যে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সংখ্যা কত হতে পারে?
ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে একটি রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পরই যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন তাতে প্রথম ধাপে প্রায় ১৫ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্টকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করবেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সম্প্রতি ১৫ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্টের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এই তালিকা ধরেই অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করা হবে। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর অষংখ্য ভারতীয় বৈধ ও অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করে। এ সংখ্যা যে কত বিশাল তা অনুমান করা যায় গত ৩ বছরে প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় সীমান্তে আটক করার ঘটনায়। যুক্তাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে অধিক সংখ্যক অবৈধ ইমিগ্রান্ট থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান তৃতীয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো ও এল সালভেদর। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অবৈধ ইমিগ্রান্টদের প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকায়ভূক্ত করেছে। তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটান, কিউবা, ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন যে যেসব দেশ ইমিগ্রান্টদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানাবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে ব্যবসা না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা অত্যন্ত কঠিন করে তুলবেন এবং তাদের ওপর মোটা অঙ্কের শুল্ক আরোপ করবেন। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বসবাসের ওপর বড় ধরনের চাপ আসছে।