শিরোনাম দেখে আপনি অবাক হতে পারেন। কিন্তু এটাই সত্যি। নিউইয়র্কে একটি চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠেছে, যারা ফুটপাত এবং বিভিন্ন পান-সিগারেটের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। চাঁদাবাজ চক্রটি প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশি অধ্যুষিত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলিন, ওজোনপার্ক, এস্টোরিয়া এবং ব্রঙ্কস এলাকা থেকে চাঁদা তুলছে।
আইনের দেশ আমেরিকায় চাঁদাবাজি, এটা কী করে সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। কারণ চাঁদা যিনি দিচ্ছেন, তিনি নিজেই একজন অপরাধী। অর্থাৎ নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসের অনুমতি বা লাইসেন্স না নিয়ে ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসা খুলে বসেছে তারা। আর পানের দোকান এখানে পুরোপুরি অবৈধ। এসব দোকানে সিগারেট বিক্রিরও অনুমতি নেই। যাদের লাইসেন্স আছে, তাদের নকল সিগারেট বিক্রির অনুমতি নিশ্চয় নেই! আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চাঁদাবাজ চক্র। এই গোমর শুধু তারাই জানে। ফলে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতি সপ্তাহে অবৈধ এসব দোকান থেকে চলছে চাঁদা আদায়।
একাধিক সূত্র জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় পান-সিগারেট বিক্রির অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। এছাড়া ফুটপাতে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসা দোকান রয়েছে শতাধিক। এসব দোকানের বেশিরভাগেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। ইসলামিক বই ও পণ্যসামগ্রি বিক্রির অনুমতি থাকলেও ফুটপাতের এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে জামা-কাপড় এবং ফলমুল থেকে কাঁচাবাজার সামগ্রী। পথচারিদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিভিন্ন সময় এসব ব্যবসায়ীকে জরিমানা করছে। এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে উঠতি যুবকেরা, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। তারা ফুটপাতের এসব দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৫০ ডলার করে চাঁদা নিচ্ছে। কেউ দিতে অস্বীকার করলে সিটির কাছে নামে-বেনামে অভিযোগ করছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এবং সিটির বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা এজেন্সি এসে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের জরিমানা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যাকসন হাইটসে ফুটপাতের একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি দেশ থেকে এসেছেন এক বছর হলো। বাসায় বেকার সময় কাটান বলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফুটপাতে দোকান সাজিয়ে বসেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে একদল উঠতি যুবক এসে চাঁদা নিয়ে যাচ্ছে। না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। অন্যরা দিচ্ছে, তাই আমিও দিচ্ছি।
একটি সূত্র জানায়, নিউইয়র্কে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাপথে আসা সিগারেট বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পানের দোকানে। যে দোকানে পান-তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ, সেখানে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সিরারেট বিক্রি হয় কি করে? জানা গেছে, শুধু শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সিরারেট নয়, অনেক দোকানে নকল সিরারেট বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নকল সিগারেট অধিক ক্ষতিকর। কান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অথচ জেনেশুনে বহু দোকানি নকল সিরারেট বিক্রি করে অবৈধ আয় করছে। তাদের এই দুর্বলতা জেনে একশ্রেণির উঠতি যুবক অর্থ আদায় করছে। দোকানিরা এটাকে চাঁদাবাজি বলছেন। কারণ এটা এখন সপ্তাহভিত্তিক বা নিয়মিত হয়ে গেছে। চাঁদার টাকা না দিলে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। ইতিপূর্বে সিটির ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের গোয়েন্দারা ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কুইন্সে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি বিপুল পরিমাণ কাঁচা তামাক ও অবৈধ সিগারেট আটক করেছে। পরে ওই দোকানিকে মোটা অংকের অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রবাসে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে পান-সিরারেটের দোকান। মাত্র ১ ডলারে কেনা এক প্যাকেট নকল সিগারেট এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ ডলারে। অনকল সিগারেট পান করায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। যারা নিয়মিত ধুমপায়ী তাদের অনেকেই ব্যয় সংকোচনের জন্য কমদামি সিগারেট কিনছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ধুমপায়ী জানান, যেসব দোকানে নকল ও শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সিরারেট বিক্রি হয়, সেসব দোকানের অনেকগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে কি পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্য বিক্রির আড়ালে ধুমসে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ সিগারেট। কিন্তু চাঁদাবাজ চক্র জেনে গেছে, কোথায় কারা এসব বিক্রি করছে। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তারাও হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। বিষয়টি এখনো প্রশাসনের নজরে আসেনি। কেউ অভিযোগও করছে না। কারণ যারা অভিযোগ করছে তারা নিজেরাই অবৈধ দোকানি।