নিউইয়র্ক সিটিতে দিন দিন বাড়ছে বাসা ভাড়া। যারা নিজ বাসা বা বাড়িতে থাকেন, তাদেরও বাড়ছে ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ। যারা বিভিন্ন কোঅপ কিংবা কন্ডোতে থাকেন, তাদেরও বাড়ছে হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন ফি। এসব খরচের পাশাপাশি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। করোনার আগে একটি পরিবারের মাসিক খরচ যা ছিল, এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু সে হারে আয় বাড়েনি। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে না পেরে অনেক মানুষকে পারিবারিক খরচের বাজেট কমাতে হয়েছে। আগে যতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পেতেন, এখন সেটি পাচ্ছেন না। সন্তানদেরকেও তেমন ভালো খাবার দিতে পারছে না নিম্ন আয়ের মানুষ। বাসা ভাড়া ও খাবারের খরচ জোগাড় করতেই সব শেষ। স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের তেমন কোনো অর্থ জমা থাকছে না। এর ওপর পরিবহন খরচ তো আছেই। চার সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের সদস্যরা প্রতি মাসে চারটি আনলিমিটেড সাবওয়ে কার্ড কিনলে কেবল তাদের এই অর্থের পরিমাণ ৫৩২ ডলার। বছরে চারটি করে আনলিমিটেড কার্ড কিনলে একটি পরিবারের খরচ ৬৩৮৪ ডলারের মতো। এটি কেবল সাবওয়ে ট্রেন ও বাস ব্যবহার করার জন্য। কারও যদি গাড়ি থাকে, সেখানে গাড়ির খরচ, জ্বালানি ও ইন্স্যুরেন্সের খরচও অনেক। তাই স্বল্প আয়ের মানুষেরা সিটিতে নিদারুণ কষ্টে আছেন।
এদিকে খবর পাওয়া গেছে, নগরবাসীর খরচের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে। জানা গেছে, নতুন বছর থেকে এমটিএ সাবওয়ে ও বাসের টিকিটের দাম বাড়াচ্ছে। এখন একটি সিঙ্গেল রাইডের দাম হলো ২.৯০ ডলার। ৩০ দিনের আনলিমিটেড কার্ডের দাম ১৩৩ ডলার। আগামী বছরের শুরুতে এই ভাড়ার পরিমাণ ২.৯০ ডলারের স্থলে হবে ৩.০০ ডলার। প্রতি রাইডে ১০ সেন্ট করে বাড়ছে। এমটিএর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় লোকসান কমানো ও অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এমটিএর সাবওয়ে ও বাস ব্যবহার করেন এমন কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমটিএর ভাড়া বাড়ানোর খবরে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমরা তিন সদস্যের একটি পরিবার। তিনজনই বাইরে যাই। কাজ ছাড়াও লেখাপড়া ও বিভিন্ন কারণে যাতায়াত করতে হয়। এ অবস্থায় দিন দিন যদি সাবওয়ে ও বাসের ভাড়া বাড়ে, তাহলে আমাদের কষ্ট আরও বাড়ে। চিন্তা করেই পাই না সীমিত আয় দিয়ে কীভাবে আমরা চলব। এই বাড়তি খরচ কীভাবে মেটাব। আমরা সীমিত আয়ের মানুষেরা অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। এককথায় বলতে গেলে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়েছুড়ে দু’চোখ যেদিকে যায়, সেদিকে চলে যাই। এই আমেরিকায় এখন আর কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। সংসারের এত এত খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছি না। নিজ দেশে ফিরে যাব, এমনটাও ইচ্ছে হয় না।
তিনি আরও বলেন, এখানে ফেয়ার ফেয়ার্স নামে একটি প্রোগ্রাম আছে। এই প্রোগ্রামের অধীনে একটি পরিবার কম আয় হলে মেট্রো কার্ড অর্ধেক ভাড়ায় পেতে পারে। সমস্যা হলো এটার আয়ের সীমা এত কম যে সেটা কভার করছে না। কারণ আয় সামান্য বেশি। এ জন্য পাচ্ছি না। আবার এই প্রোগ্রামে একটি পরিবারকে একটি কার্ড দেওয়া হয়। তিন সদস্যের পরিবার অর্ধেক ভাড়ার একটি কার্ড পেলে কী লাভ? আসলে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য একটি পরিবারের সকল সদস্যের জন্য একটি করে কার্ড দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে যারা স্কুলে পড়ে, তারা কার্ড পায়। যারা কলেজে পড়ে, তাদের জন্য কার্ড দেওয়া হয় না। যারা কলেজে পড়ে, তাদেরও অর্ধেক ভাড়ায় কার্ড দেওয়া দরকার। একজন কলেজ স্টুডেন্টের জন্য এটা জরুরি। তারা ২০ ঘণ্টা কাজ করা, লেখাপড়া করার পর যতটুকু অর্থ আয় করে, তা দিয়ে তাদের সব খরচ অনেক ক্ষেত্রেই হয় না। ফলে তাদেরকে অনেক টেনশনে থাকতে হয়। বাবা-মায়ের অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে হয়। থাকা-খাওয়া, পোশাক ও যাতায়াত খরচের ব্যবস্থা করতে হয়।
একজন স্টুডেন্ট বলেন, আমি প্রতিদিন কলেজে যাই। সাবওয়ের ভাড়া ও বাস ভাড়ার জন্য অর্ধেক দামে একটি কার্ড পেলে আমার জন্য সুবিধা হতো। আমি তো পেল গ্র্যান্ট পাই। তাহলে সিটির এমটিএ কর্তৃপক্ষ কি সেটি করতে পারে না?