যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি খামারবাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) অভিযানে ১৫০টির বেশি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটা এযাবৎকালে এফবিআইয়ের একসঙ্গে জব্দ করা সবচেয়ে বেশি পরিমাণের বিস্ফোরক এগুলো।
গত ১৭ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ১৮০ মাইল দক্ষিণে আইলে অব উইট কাউন্টি থেকে ব্র্যাড স্পাফোর্ড গ্রেপ্তার হন। তিনি নিজস্ব খামার বাড়িতে অস্ত্র এবং বাড়িতে তৈরি গোলাবারুদ মজুত করছেন বলে খবর পাওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্পাফোর্ড তাঁর স্ত্রী এবং ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকতেন।
তল্লাশি চালানো ব্যক্তিরা বলেছেন, বিস্ফোরকগুলোর কিছু পাওয়া গেছে একটি শোবার ঘরে। এগুলো সেখানে একটি ব্যাকপ্যাকের ভেতর অনিরাপদ অবস্থায় ছিল। ব্যাকপ্যাকটির গায়ে লেখা ছিল ‘নোলাইভসম্যাটার’। এটা মূলত সরকারবিরোধী কট্টর ডানপন্থী একটি আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শুধু একটি অনিবন্ধিত শর্ট-ব্যারেল রাইফেল (খাটো ব্যারেলের রাইফেল) রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তদন্তকারীরা বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার তদন্তকারীরা বলেছেন, প্রাথমিক পর্যালোচনা অনুযায়ী এফবিআইয়ের ইতিহাসে একসঙ্গে এত বেশিসংখ্যক ‘তরতাজা বিস্ফোরক’ জব্দ করার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
স্পাফোর্ড কোনো বস্তুকে নিশানা করার অনুশীলন করতেন। অভিযোগ আছে, নিশানা অনুশীলনের জন্য তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি ব্যবহার করেছিলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হত্যার শিকার হবেন বলে আশা প্রকাশ করতেন তিনি।
আদালতের কাগজপত্র অনুসারে, স্পাফোর্ড সম্প্রতি স্থানীয় একটি রেঞ্জে গিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্নাইপার-রাইফেল শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা সনদ চেয়েছিলেন।
স্পাফোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগসংক্রান্ত নথি অনুযায়ী এক প্রতিবেশী বলেছেন, স্পাফোর্ড ২০২১ সালে ‘বাড়িতে তৈরি একটি বিস্ফোরক যন্ত্র নিয়ে কাজ করার সময়’ তাঁর ডান হাতের তিনটি আঙুল হারান। তবে এরপরও তিনি বোমা তৈরির কাজ ছাড়েননি।
স্পাফোর্ডের ওই প্রতিবেশীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কাজ করতেন। তদন্তকারীরা বলছেন, এই বছরের শুরুতে স্পাফোর্ডের ২০ একরের খামারটি পরিদর্শন করেছিলেন ওই প্রতিবেশী। ওই সময় তাঁর সঙ্গে একটি রেকর্ড করার যন্ত্র ছিল।
প্রতিবেশীর সংগ্রহ করা আলামতের ভিত্তিতে এফবিআইয়ের প্রতিনিধিরা ওই খামারে তল্লাশি চালিয়েছিলেন। অভিযোগের নথি অনুসারে, তাঁরা একটি বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরক খুঁজে পেয়েছিলেন।
এফবিআইয়ের প্রাথমিক পর্যালোচনায় ওই বিস্ফোরকগুলোকে ‘পাইপবোমা’ বলে মনে হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই আলাদা একটি গ্যারেজে রাখা ছিল। এগুলোকে রং অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। এর কিছু কিছু ‘প্রাণঘাতী’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল।
আদালতের কাগজপত্রে বলা হয়েছে, বেশ কিছু বোমা পরিধানযোগ্য একটি পোশাকের ভেতর পাওয়া গেছে। আর বাড়িতে রাখা একটি ব্যাকপ্যাকের ভেতরে সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় আরও বোমা পাওয়া গেছে।
তদন্তকারী ব্যক্তিরা বলছেন, পাইপবোমা ছাড়াও তাঁরা এইচএমটিডি নামের বিস্ফোরকের একটি কৌটা খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। এফবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, এ বিস্ফোরক এতটাই স্পর্শকাতর যে শুধু তাপমাত্রার পরিবর্তনের হলেই এটি বিস্ফোরিত হতে পারে। এগুলো বিস্ফোরণের জন্য বিস্ফোরক যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না।
আদালতের কাগজপত্র অনুসারে জানা গেছে, এইচএমটিডিভর্তি কৌটার গায়ে ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘ছোঁবেন না’ লেখা ছিল। একটি ফ্রিজে খাবারের পাশে এগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিল, যা বাচ্চাদের হাতের নাগালে ছিল।
স্পাফোর্ড একটি মেশিনের দোকানে কাজ করতেন। তাঁর ওই প্রতিবেশী তদন্তকারীদের বলেছেন, স্পাফোর্ড ছাদে একটি ৫০-ক্যালিবার আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন।
স্পাফোর্ডের এক আইনজীবী গতকাল বলেন, সরকার তাঁর মক্কেলকে বিপজ্জনক বলে যে দাবি করেছে, তা ঠিক নয়। কারণ, সন্দেহভাজন ব্যক্তির কোনো অপরাধ সংঘটনের ইতিহাস নেই।
মামলার তত্ত্বাবধানকারী ফেডারেল বিচারক স্পাফোর্ডকে প্রাযুক্তিকভাবে নজরদারির মধ্যে রেখে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে। কারণ, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিচার-পূর্ব আটক রাখতে চাইছে সরকার।