ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রাতঃকালীন পোস্টে তাঁর কাছ থেকে নানা বার্তা পেয়েছেন। তাদের জন্য কী ধরনের নীতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে; কোন অপমান অপেক্ষা করছে– এসব বার্তায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকত। চার বছর পর কূটনীতিকরা আবারও নতুন ঝাঁকুনি খেতে যাচ্ছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ‘নতুন সূর্যের’ উদয় হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে এমন বর্ণনা উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, প্রথম মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরে নেননি, অথবা তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে কারাগারে পাঠাননি। প্রশ্ন উঠছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের মন্ত্রীরা কি সুনির্দিষ্টভাবে তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন?
ট্রাম্পের নতুন প্রাতঃকালীন বার্তায় উত্তর সাগরে কর্মরত তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি মার্কিন কোম্পানির ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প লেখেন, ‘যুক্তরাজ্য অনেক বড় ভুল করছে। উত্তর সাগর খুলে দিক। উইন্ডমিল থেকে মুক্তি পাক।’
এটা কি কেবলই একটি জ্বালানি কোম্পানি বা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন? এটা কি একটি মিত্র দেশের (যুক্তরাজ্য) অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল নয়? তবে চার বছর আগের চেয়ে এবার মূল পার্থক্য হলো– এখন ট্রাম্প একা এটা করছেন না। তাঁর সঙ্গে আছেন ক্রমশ পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা সহযাত্রী ইলন মাস্ক। আরও স্পষ্ট করে বললে, ব্রিটিশ সরকারকে আক্রমণ করতে মাস্ক তাঁর মালিকানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সকে ব্যবহার করছেন। যুক্তরাজ্যে গত গ্রীষ্মের দাঙ্গা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও শিশু নিপীড়ন নিয়ে এক্সে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মাস্ক কয়েকটি পোস্টও দিয়েছেন। এতে অভিযোগ করা হয়, স্টারমার যখন পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক ছিলেন, তখন তিনি শিশু নিপীড়কদের শাস্তি দিতে যথেষ্ট কাজ করেননি। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা আটলান্টিকের ওপার থেকে এ পোস্টগুলোকে আটকাতে পারেন না। তবে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের কিছু সংখ্যক রক্ষণশীল মাস্কের এজেন্ডার সঙ্গে জড়িত; তারাই তাঁর বক্তব্যকে প্রতিধ্বনিত করছেন। দলের নেতা কেমি ব্যাডেনোচ বলেন, সংগঠিত শিশু অপরাধের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তদন্তে সময় লাগছে অনেক বেশি।
তবে কট্টর ডান টমি রবিনসনের প্রতি মাস্কের অকুণ্ঠ সমর্থন ইস্যুতে আবার ব্রিটেনের রক্ষণশীলরা বেঁকে বসছেন। গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে থাকা ইসলামবিদ্বেষী রবিনসনের মুক্তি চেয়ে ইলন মাস্ক এক্সে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের ছায়ামন্ত্রী এলিসিয়া কেয়ারন্স বলেন, টমি রবিনসনের মতো লোককে বড় করে তুলে ধরতে মাস্কের প্রচেষ্টা অত্যন্ত ভয়ংকর।
তবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের একজন ইলন মাস্কের সঙ্গে লড়াই এড়াতে চায় লেবার পার্টি। কারণ, একসময় তিনি বিরোধী দলকে তহবিল জোগাতে পারেন। নাইজেল ফারাজের রিফর্ম পার্টি বলছে, যেসব ধনকুবের তাঁর দলকে অর্থ সহায়তা দিতে চান, তাদের মধ্যে মাস্কও আছেন।
কেবল যে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছেন মাস্ক, এমনটা নয়। তিনি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে ‘নির্বোধ’ বলে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ারকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী একনায়ক’ বলে মন্তব্য করেছেন। মাস্ক কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘অসহনীয়’ বলে বর্ণনা করে বেশি দিন তিনি ক্ষমতায় থাকছেন না বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।