দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের ধাক্কা কি সামলাতে পারবে আমেরিকা?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৬

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২০ জানুয়ারি। এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাপকভাবে অভিবাসী বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি। তার প্রশাসনের এই উদ্যোগকে ‘আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বহিষ্কার অভিযান’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মস্থলে অভিযান এবং প্যারোল কর্মসূচি বাতিলের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহারেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এটি ১৯৫০-এর দশকের বিতর্কিত ‘অপারেশন ওয়েটব্যাক’ অভিযান থেকে অনুপ্রাণিত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ওই অভিযানে প্রায় ১৩ লাখ মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অননুমোদিত অভিবাসী বসবাস করতেন, যাদের মধ্যে ৮৩ লাখ সরাসরি কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে এবং এটি এখন প্রায় এক কোটি হতে পারে। এই অভিবাসীরা নির্মাণ, কৃষি এবং রেস্তোরাঁ খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তাদের হঠাৎ করে বহিষ্কার করার ফলে এই খাতগুলোতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেবে এবং উৎপাদন কমে যাবে।
গবেষণা বলছে, অভিবাসী শ্রমিকদের অনুপস্থিতি স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর বদলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কলোরাডো ডেনভার ইউনিভার্সিটির ক্লোই ইস্ট এবং সহ-লেখকদের একটি গবেষণায় দেখা যায়, বারাক ওবামার শাসনামলে প্রতি ১১ জন অভিবাসী বহিষ্কারের জন্য একজন স্থানীয় কর্মী তার চাকরি হারিয়েছিলেন।
মূল্যস্ফীতি ও কৃষি খাতের সংকট
অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতে শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। বর্তমানে দেশটির প্রায় ২৫ লাখ কৃষি শ্রমিকের মধ্যে ১০ লাখই অননুমোদিত অভিবাসী। বিশেষ করে, দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খাতে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প মজুরিতে এসব কাজ করতে স্থানীয় শ্রমিকরা অনাগ্রহী। ফলে উৎপাদন কমে গেলে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্মাণশিল্প ও আবাসন খাতে প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণ খাতেও অভিবাসীরা বড় অবদান রাখেন। প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী এই খাতে কাজ করেন, যা মোট নির্মাণ শ্রমিকের প্রায় ১৫ শতাংশ। তাদের অনুপস্থিতি আবাসন খাতের সরবরাহ সংকটে ভূমিকা রাখবে এবং গৃহনির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।
রাজস্ব ক্ষতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ
অননুমোদিত অভিবাসীরা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও তারা বিক্রয় কর, বেতন কর, এমনকি বাড়িভাড়ার মাধ্যমে সম্পত্তি করও প্রদান করেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে। ফলে এসব অভিবাসীকে বিতাড়িত করলে সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের মতে, অভিবাসীদের উপস্থিতি ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ৯০০ বিলিয়ন ডলার কমাতে সাহায্য করবে। তবে অভিবাসী শ্রমশক্তি কমে গেলে সেই সুবিধাগুলো বিলীন হয়ে যাবে।
তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিণতি আরও গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।