গত এক দশকে পাসপোর্টের বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে আমেরিকান পাসপোর্টের শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়েছে। অন্যদিকে, শক্তিশালী হয়েছে চীনা পাসপোর্টের অবস্থান। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আমেরিকান পাসপোর্ট ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে ১৮৬টিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ দেয়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এখন নবম স্থানে নেমে গেছে। এ সময়ের মধ্যে ভেনেজুয়েলার পরে এটিই সবচেয়ে বড় পতন বলে দাবি করছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পতন দেশটির ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সংরক্ষণমূলক নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষত দেশটির শুল্ক নীতি ও ব্যাপক বিতাড়ন নীতিগুলি এ অবস্থার জন্য দায়ী।
গ্রান্ট থর্নটনের চীন শাখার অংশীদার ও অধ্যাপক টিম ক্লাট্টে বলেন, ট্রাম্পের সরাসরি বৈদেশিক নীতিগুলি আমেরিকান পাসপোর্টের শক্তিতে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তাদের কাছে আসা অভিবাসন অনুরোধগুলোর মধ্যে ২১ শতাংশ ছিল আমেরিকানদের। ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে বিদেশে স্থানান্তরের প্রবণতা বাড়ছে। ২০২৫ সালে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার মিলিয়নিয়ার স্থানান্তরিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন ২০২৩ সালে ১৫ হাজার ২০০ উচ্চ আয়ের ব্যক্তি হারিয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এই প্রবণতা দেখা গেছে। তবে পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে ৬০তম স্থানে উঠে এসেছে চীন, যেখানে ২০১৫ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ৯৪তম।
এদিকে, এ তালিকায় ১৯৫টি গন্তব্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। এদিকে, আফগানিস্তান এখনও তালিকার সর্বনিম্নে রয়েছে, যেখানে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার উচ্চ র্যাঙ্কিং পাওয়া দেশগুলো পারস্পরিক ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গত দশকে নতুন ভিসামুক্ত চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের পার্সপোর্ট শক্তিতে পতনের অন্যতম কারণ।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প আবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন, যা তার আগের প্রশাসনের সময় মুসলিম প্রধান দেশ ও ভেনেজুয়েলাসহ উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান এইচ. কাইলিন বলেন, নাগরিকত্বের ধারণাটি পুনরায় চিন্তা করার সময় এসেছে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংঘাত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করতে বাধ্য করছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া