দাবানল নিয়ে চটেছেন ট্রাম্প, দুষছেন ডেমোক্র্যাটদের

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭, ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৪

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নরের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক বিবাদে জড়ালেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মঙ্গলবার দাবানল শুরুর পর এখন পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ট্রাম্প কোনো প্রমাণ ছাড়াই ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করা শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের বিরুদ্ধে তুলেছেন নানা ধরনের ব্যর্থতার অভিযোগ। এসব অভিযোগের একটি, নিউসম পানির অপচয় করছেন।
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে গতকাল বলেন, ‘গ্যাভিন নিউজকামের (গভর্নর নিউসম) পদত্যাগ করা উচিত। সব তাঁর ব্যর্থতা!’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ আগুন এটাই বলছে, ২০ জানুয়ারির জন্য আর অপেক্ষার সময় নেই।’ দিনটিতে জো বাইডেনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
‘এটিকে বাইডেন–নিউজকাম জুটির চরম অক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হিসেবে প্রকাশ পেতে দিন’, বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেনশিয়াল মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান গুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে গতকাল বাইডেনের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাবানল পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের দিনই এ সফর বাতিল করেন তিনি।
একই দিন হোয়াইট হাউসে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেন বাইডেন। এ সময় ট্রাম্পকে পাল্টা আক্রমণ করে তিনি বলেন, এ দাবানল নিয়ে লোকজনের রাজনীতি করা উচিত নয়।
প্রেসিডেনশিয়াল মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান গুরু পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে গতকাল বাইডেনের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাবানল পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের দিনই এ সফর বাতিল করেন তিনি।
হলিউডের সানসেট বুলেভার্ড এলাকা জ্বলছে, উড়ে যাচ্ছে একটি হেলিকপ্টার। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ 
হলিউডের সানসেট বুলেভার্ড এলাকা জ্বলছে, উড়ে যাচ্ছে একটি হেলিকপ্টার। 
ট্রাম্পের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বাইডেন বলেন, ‘আমি খুব স্বল্পসময়ের মধ্যে অফিস ছাড়ছি। কিন্তু এটি (দাবানল) রাজনীতির বিষয় নয়। এটি মানুষের মধ্যে এ নিরাপত্তার অনুভূতি এনে দেওয়ার বিষয় যে আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব।’
ইতিমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ দাবানল মোকাবিলায় সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে অর্থ ও অন্যান্য উপকরণের জোগান দেওয়ার বিষয়ে নানা রকম ঘোষণা দেন জো বাইডেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের অব্যবস্থাপনায় দাবানল নিয়ন্ত্রণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে—রিপাবলিকানদের এমন অভিযোগ খণ্ডন করতেই এ সময় বেশি আগ্রহী দেখা গেছে তাঁকে।
আমি খুব স্বল্পসময়ের মধ্যে অফিস ছাড়ছি। কিন্তু এটি (দাবানল) রাজনীতির বিষয় নয়। এটি মানুষের মধ্যে এ নিরাপত্তার অনুভূতি এনে দেওয়ার বিষয় যে আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের অভিযোগ, গভর্নর নিউসম তুষার গলে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছেন। এতে দাবানল নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাইডেন প্রশাসন বলছে ভিন্নকথা। তাদের বক্তব্য, মূল সমস্যা বিদ্যুৎ নিয়ে। কেননা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আশঙ্কা, বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকলে ত্রুটিযুক্ত সঞ্চালন লাইনের কারণে আগুন আরও ছড়াতে পারে। এ অবস্থায় পানির পাম্পগুলো বন্ধ আছে।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে জো বাইডেন এ যুক্তিকে ভালোভাবে প্রচার করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘সংকটকালে গুজব ও ভয় খুবই দ্রুত ছড়ায়। এতে যেসব মানুষ সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত নন, তাঁরা স্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অভিযোগ করেন যে তাঁরা যত্নশীল নন।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন এটাই দেখাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন বাস্তবিকই ঘটছে।’

দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭, ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের আগুনে পুড়ে মৃত বেড়ে ৭ হয়েছে। তবে কতজন মারা গেছেন তা অস্পষ্ট। ক্ষতিগ্রস্ত-ধ্বংস হয়েছে ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা। দাবানলের আগুন হলিউড হিলসসহ একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে দাবানলের গতি ও ভয়াবহতায় দমকল কর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খবর বিবিসি, সিএনএনের
বৃহস্পতিবার সেখানে পাচটি সক্রিয় দাবানলে পুড়ছিল সবকিছু। এরমধ্যে ইটন নামে একটি দাবানল গতকাল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এ দাবানলটি ১৭ হাজার ৬০০ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়েছিল। শক্তিশালী বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পানির চাপ কম থাকায় আগুনের তীব্রতা শুধু বাড়ছিল। দাবানলে পুড়ে গেছে  হলিউড হিলসও। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটিও কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় বিভিন্ন শহর থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যালিসাদেস। সেখানে এমন কিছু নেই যা আগুনে পোড়েনি। প্যালিসাদেসের সানসেট নামের সড়ক, যেটি লস এঞ্জেলসের মধ্যে দিয়ে মাইলের পর মাইল গেছে। সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, যেসব ব্যাংক, ক্যাফে, সুপারমার্কেটে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেগুলার সবই পুড়ে গেছে। মাইকেল পায়টন নামের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে বলেন, ‍পুরো প্যালিসাদেস ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো শহরটি শেষ। এটি পুরোপুরি একটি বিপর্যয়।
গত কয়েকদিন ধরেই সেখানকার আবহাওয়াবিদরা দাবানলের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, আবহাওয়া বেশ শুষ্ক হয়ে পড়েছে। তাদের সেই সতর্কতা সত্যি হয়ে এখন সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, বাড়ির পর বাড়ি, গাছপালা সবকিছু দাবানলে দাউদাউ করে জ্বলছে। এই আগুন নেভাতে সেখানে বর্তমানে ৭ হাজার ৫০০ ফায়ারকর্মী কাজ করছেন।
দাবানলের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে পোষা প্রাণীরাও। এসব প্রাণীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের। এরমধ্যে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারা তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রাণীদের রাখতে দিচ্ছে। এছাড়া কিছু হোটেল বিপদগ্রস্ত মানুষকে কমমূল্যে রুম ভাড়া দিচ্ছে। সঙ্গে পোষা প্রাণীদেরও রাখার সুযোগ দিচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার অগ্নি বিশেষঞ্জ শেড হ্যানসন বিবিসিকে বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটি তাকে বেশ অবাক করেছে। আগুন এতটাই ছড়িয়েছে যে কোনো কোনো জায়গার সব ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। 
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফায়ার ফাইটাররা যখন দাবানলটির তীব্রতা দেখল তখন তারা এটি নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি করলো। এখন পর্যন্ত দাবানলের আগুনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে যদি শুরু থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে না নেওয়া হতো তাহলে সংখ্যাটি কয়েকশ হতে পারত। 
লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলের কারণে ইতালি সফর বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত তিনি এই বিপর্যয়ের ওপর নজর রাখবেন। বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সহায়তা করবেন। 
এদিকে দাবানলের আগুনের কারণে সেখানে স্বাস্থ্যগত ঝুকিও তৈরি হয়েছে। অন্তত দুটি পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে কলের বদলে বোতলজাত পানি পানের আহ্বান জানিয়েছে। 
অ্যান রিমিয়ন নামের এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, আগুনের দাহ থেকে যে সূক্ষ্ম কণা পদার্থ বের হয়, সেটি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। 
তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, দাবানল থেকে যারা দূরে আছেন তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আগুনের এসব কণা ফুসফুস এমনকি ধমনীতে পর্যন্ত প্রবেশ করে যে কাউকে অসুস্থ করে দিতে পারে।