যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধে জড়িত হলেই ডিপোর্টেশন করতে পারবে আইসিই

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৯

যুক্তরাষ্ট্রে এখন থেকে কোন অবৈধ অভিবাসী কিংবা অভিবাসন প্রত্যাশীরা অপরাধে জড়িত হলেই তাদের গ্রেপ্তার করে কোন বাধা ছাড়াই ডিপোর্টেশন করতে পারবে আইসিই পুলিশ। ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ‘কংগ্রেসের’ নতুন অধিবেশনের প্রথম দিনেই অনিবন্ধিত অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়নের বিধান রেখেই ‘ল্যাকেন রাইলি অ্যাক্ট’ বিল পাশ করা হয়েছে। এতে অবৈধ অভিবাসী যাদের ডিপোর্টেশন অর্ডার আছে বা যে কোন অপরাধে অভিযুক্ত আছেন তাদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনে কোন আইনী বাধা থাকবেনা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের।
এদিকে এ বিলটি পাসের পর কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশী কমিউনিটির অভিবাসন প্রত্যাশীরা। নিউইয়র্কে বসবাসরত অভিবাসন প্রত্যাশী নাজমুল হোসেন নামে ২৫ বছর বয়সী তরুণ। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে মেক্সিকো সীমান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসেন। এরপর তিনি এসাইলাম প্রার্থনা করেন। ২০২৪ সালে একটি ডেলি গ্রোসারীতে কাজের সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হই। কারণ ওই দোকানে সিগারেট ও ভেপ বিক্রির অনুমতি ছিলোনা। এ বিষয়ে কিছুই জানতামন না ও কর্ণধার কিছুই অবগত করেননি। দায়িত্ব পালনের সময় ভেপ বিক্রির অপরাধে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে তিনি এটর্নীর মাধ্যমে মুক্ত হোন। এ কেসটি এখনো চলমান। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি এসাইলাম পেন্ডিং থাকাবস্থায় অন্য কোন অপরাধে অভিযুক্ত হলে আইসিই পুলিশ আটক করে এদেশ থেকে বের করে দিতে পারবে দ্রুত। এটর্নীর সাথে আলাপ করেছি , তিনি আমাকে এ সতর্ক থাকতে বলেছেন। ফেসবুকের কমিউনিটি গ্রুপে অভিবাসীদের ধরপাকড়ের কিছু পোস্ট দেখে এখন আরো ভয়ে আছি।
এস্টোরিয়াতে বসবাসকারী ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি ২২ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এখানে তাঁর পরিবারের স্ত্রী-সন্তানরা সিটিজেন হলেও তিনি এখনো আনকুমেন্টেড। তাঁর কেইস আদালত বাতিল করে দিয়েছে। এরপর আপিল করলে সেটিও বাতিল হয়ে যায় এবং ডিপোর্টেশন কার্যাদেশ বহাল আছে। এখন ডিপোর্টেশন আদেশপ্রাপ্তরা গণ নির্বাসনের প্রথম টার্গেট শুনে পরিবার থেকে বিচ্ছেদের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সম্প্রতি বাঙালি কমিউিনিটির একটি ফেসবুক গ্রুপে বাংলাদেশি বেশ কয়েকজনের এসাইলাম বাতিল হয়েছে ও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন দাবি করে মোবারক দেওয়ান নামে একজন পোস্ট করেন। এরকম ধরপাকড়ের খবরে এবং ৭ জানুয়ারি কংগ্রেসে’র অধিবেশনে অভিবাসীদের বিতাড়নে আইন পাশে কমিউনিটির অনেকের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়েছে।
৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে’র অধিবেশনে ২৬৪-১৫৯ ভোটে ‘ল্যাকেন রাইলি অ্যাক্ট’ নামে এই বিল পাস হয়। রিপাবলিকানদের সাথে ৪৮ জন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই বিলে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকা সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।  বিলটির মাধ্যমে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন চুরি, লুটপাট ও অন্যান্য অ-হিংসাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের হেফাজতে নেয়।
বিলের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনায় ছিলো চুরি ও অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত অ-নাগরিকদের আটক ও বহিষ্কার করতে পরবে। যেসব অঙ্গরাজ্য অভিবাসন নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করবে, তাদের অ্যাটর্নি জেনারেলদের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
বিলের নামকরণ: এই বিলের নামকরণ করা হয়েছে ল্যাকেন রাইলির নামে। ল্যাকেন ২২ বছর বয়সী নার্সিং শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ল্যাকেন রাইলিগত বছর একজন ভেনেজুয়েলার অবৈধ অভিবাসীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন। খুনের মামলায় অভিযুক্ত হোসে ইবারাকে নভেম্বরে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, আমাদের সীমান্ত সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি আজ থেকেই শুরু হলো। তিনি আরও বলেন, লেকেন রাইলি অ্যাক্ট এ কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।