দ্য ইকোনমিস্ট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার ক্ষতি ডেকে আনবে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:১০

দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই আগের মতো একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। ওভাল অফিসে ফিরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দিকে নজর দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এটা মোটেও ইতিবাচক নয় বরং তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
হোয়াইট হাউজে ফিরে এসে ওই আদেশে সই করার সময় তিনি বলনে, এটি একটি বড় একটি সিদ্ধান্ত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হয়। সে সময় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তখনই তিনি এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।
এই নির্বাহী আদেশটি যেহেতু ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই স্বাক্ষর করা হয়েছে তাই এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ট্রাম্প ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকেই প্রচেষ্টা শুরু করেন। সে সময় তিনি একই ধরনের আদেশ জারি করেছিলেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কোনো দেশকে প্রত্যাহার করার জন্য জাতিসংঘের কাছে এক বছর আগে নোটিশ পাঠাতে হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এক্ষেত্রে আইনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বিশ্ব-স্বাস্থ্য আইন বিষয়ক অধ্যাপক লরেন্স গোস্টিনের কাছ থেকেও এ ধরনের পদক্ষেপ আসতে পারে। কারণ তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেছিলেন যে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল কারণ কংগ্রেসই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আমেরিকাকে প্রথম স্থানে রেখেছিল।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে কাজ করছে। এটি পূর্বে প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন হিসেবে পরিচিত ছিল যা ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে থাকে। তবে এর বেশিরভাগই নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য যেমন-পোলিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর মতো আমেরিকার সংস্থাগুলো যেমন সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশন (এফডিএ) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর সঙ্গেও সহযোগিতা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে অনেকেরই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ যে ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে তারা সেটা থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সারাবিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে।
কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যর্থ হয়েছে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অনুরোধের পর একটি স্বাধীন তদন্তে দেখা গেছে, সংস্থাটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়ে ধীর গতিতে কাজ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সতর্কতা ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হয়নি।
তদন্তে আরও দেখা গেছে যে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনেক দেশেই কোভিড মহামারির কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক দেশের কাছেই এটি যেন একটি ‌‘হারানোর মাস’ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রও এ থেকে বাদ যায়নি এবং কোভিড ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব কর্তৃপক্ষেরই ব্যর্থতা ছিল। সে সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং কোভিড প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য, জাতীয় পরীক্ষার কৌশল বা কোনো জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তার প্রশাসন বহু বিতর্কের পরও এফডিএ-কে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামের একটি ওষুধ তৈরি করার জন্য চাপ দিয়েছিল। এটি করোনায় কার্যকর এমন প্রমাণ স্পষ্টভাবে মেলেনি তারপরেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করা হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার ডেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ প্রবেশ সীমিত করা হবে। এছাড়া বিশ্বকে সুস্থ রাখার প্রচেষ্টার প্রধান দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে তখন চীনকে উপস্থাপন করা হবে। ফলে চীনের জন্য নানা ধরনের সুযোগ আরও বাড়বে।
তবে চলতি সপ্তাহের নির্বাহী আদেশেই বিষয়টি শেষ নাও হতে পারে। ২০২০ সালে যেমন ঘটেছে এবারও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস ২০২০ সালে দ্য ইকোনমিস্টকে বলেছিলেন যে, সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে না যাওয়ার জন্য কিছুটা ছাড় চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে যায় তবে বিশ্ব-স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।