ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের শক্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি ইউরোপের

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০২ এপ্রিল ২০২৫, ২২:০০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক বাড়ালে দেশটির বিরুদ্ধে যাতে ‘প্রয়োজনে’ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে এক ‘শক্ত পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপ।
ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ওপর বড় আকারে শুল্ক আরোপ করা নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার আগ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্প আজ ২ এপ্রিলকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘লিবারেশন ডে’ হিসেবে প্রচার করে আসছেন। এদিন নিজ প্রশাসনের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মসূচি কার্যকর করতে একগুচ্ছ শুল্ক পরিকল্পনা ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। যদিও আজ ট্রাম্প ঠিক কী ঘটাতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে অনিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, সমহারে শুল্ক ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে দেশটিতে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে দেশটিতে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি আমদানির ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন গতকাল এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ইউরোপ এই দ্বন্দ্ব শুরু করেনি (শুল্ক আরোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদ)। আমরা আবশ্যকীয়ভাবে প্রতিশোধ নিতে চাই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার শক্ত পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেটি আমরা ব্যবহার করব।’
ট্রাম্প গত রোববার মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ বিশ্বের প্রতিটি দেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াইট হাউসের মতে, বিদেশি দ্রব্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ফলে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাভ হবে যুক্তরাষ্ট্রের।

ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পরদিন সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, বুধবার (আজ) এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তাঁর শুল্ক পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। তবে ঘোষণার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি লেভিট।
ভন ডার লিয়েন তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘ইউরোপ সমঝোতা করার জন্য খোলামন নিয়ে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শক্ত অবস্থানে থেকেই এমন সমঝোতায় এগোব। বাণিজ্য থেকে প্রযুক্তি, আমাদের বাজারের আকারসহ অনেক কার্ডই ইউরোপের রয়েছে।’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান বলেন, ‘প্রয়োজনে কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এটিই আমাদের শক্ত অবস্থানের ভিত্তি। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সব উপকরণ আমাদের আছে।’
ইউরোপ এই দ্বন্দ্ব শুরু করেনি (শুল্ক আরোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদ)। আমরা আবশ্যকীয়ভাবে প্রতিশোধ নিতে চাই না। কিন্তু, যদি প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার শক্ত পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেটি আমরা ব্যবহার করব।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান
প্রতিশোধ হিসেবে ইউরোপ কী পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে ভন ডার বিস্তারিত জানাননি। অবশ্য, গত মাসেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে ধারণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ওই সময় নৌযান, মোটরবাইকসহ ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কথা জানায় ইউরোপ।
যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা পণ্যের এক বড় ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত বছর ইউরোপ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা পণ্যের একক বৃহত্তম বাজার।
গত ফেব্রুয়ারিতে ভন ডার লিয়েন যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। এ দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি ডলার উল্লেখ করে ইউরোপীয় কমিশন প্রধান গতকাল বলেছেন, ১০ লাখ মার্কিনের কর্মসংস্থান ইউরোপ–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য ঘোষণার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে কানাডা ও এশিয়ার কিছু দেশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ট্রাম্প গত রোববার মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ বিশ্বের প্রতিটি দেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াইট হাউসের মতে, বিদেশি দ্রব্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ফলে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাভ হবে যুক্তরাষ্ট্রের।
ট্রাম্পের পরিকল্পিত রপ্তানি শুল্ক প্রথমবারের তুলনায় বেশি কড়া হতে পারে। প্রথম দফায় চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভারত ও জাপানের ওপরও শুল্কের খড়্গ ঝুলিয়ে রেখেছেন। এ হুমকিতে জার্মানির ব্যবসায়ীরাও চিন্তায় পড়েছেন।

সিএনএন