শুল্ক আরোপে অস্থির আমেরিকার শেয়ার বাজারে ধস

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৩৭

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তাপ বিশ্ব বাজারে ধস নেমে এসেছে বলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১০ এপ্রিল থেকে চীনা পণ্যে ৩৪% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে সমান শুল্ক দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। ইতিমধ্যে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, এবং বিদেশি গাড়িতে ২৫% শুল্ক বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।  
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় কানাডা, মেক্সিকো, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা শুল্ক প্রস্তুত করছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করছে।  এ নিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।  আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সতর্ক করেছে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ২০২৪ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ০.৫% কমে যেতে পারে।  
চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি মন্থর হওয়া, ইউরোপে শক্তিশালী মুদ্রাস্ফীতি, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করছে। শুল্ক নীতির অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজার থেকে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন। NASDAQ, ডাও জোন্স, এবং FTSE-100-সহ প্রধান সূচকগুলো ৫-৭% নিচে নেমে এসেছে। বিদেশি গাড়িতে ২৫% শুল্কের কারণে টয়োটা, ভক্সওয়াগেনের মতো কোম্পানিগুলোর মুনাফা হ্রাসের আশঙ্কা। চীনের পাল্টা শুল্কের কারণে সয়াবিন, অ্যাপল, এবং ইন্টেলের মতো কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।  
এবারে বৈশ্বিক জিডিপি ১-২% কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, যা নিম্নআয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে বলে বলা হচ্ছে। শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা দেখা দিয়ে ২০০৮-এর অর্থনৈতিক সংকটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে মনে করছেন কিছু অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।  
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন আলোচনা চলছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর। সমঝোতা হলে শুল্ক প্রত্যাহার হতে পারে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানো বা অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাজার স্থিতিশীল করতে পারে।  
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে বিকল্প বাজারগুলোর উত্থান ঘটতে পারে। ভারত, ভিয়েতনাম, এবং বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে বিনিয়োগ বাড়লে বৈশ্বিক চাপ কমতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।  
বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্থির বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ এড়িয়ে সোনা, সরকারি বন্ড, এবং স্থিতিশীল ব্লু-চিপ স্টকে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।  
অনেকেই মনে করছেন, বাজারের এই ধস অস্থায়ী হতে পারে যদি ট্রাম্প প্রশাসন ও তার বাণিজ্য অংশীদাররা দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছান। অন্যথায়, বিশ্ব অর্থনীতি একটি কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। তবে ইতিহাস বলে, বাজার সবসময়ই পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে নেয়—প্রয়োজন ধৈর্য্য ও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।